SC > বাংলা ব্যাকরণ > বাক্য কাকে বলে? বাক্য কত প্রকার ও কি কি?

বাক্য কাকে বলে? বাক্য কত প্রকার ও কি কি?

বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাক্য। বাক্য শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল কথ্য বা কথিত বিষয়। অর্থবোধক বাক্য ভাষার প্রাণ। বাক্য ব্যাকরণের বাক্যতত্ত্ব নামক অংশে আলোচিত হয়। ভাষার মূল উপকরণ বাক্য এবং বাক্যের মৌলিক উপাদান শব্দ। আজকের আর্টিকেলে আমরা বাক্য কাকে বলে? বাক্য কত প্রকার ও কি কি? ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

বাক্য কাকে বলে
বাক্য কাকে বলে?

বাক্য কাকে বলে? বাক্য কী? উদাহরণ সহ

কয়েকটি শব্দ মিলিত হয়ে যখন একটি পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশিত হয়, তখন তাকে বাক্য বলে। আবার বলা যায় এক বা একাধিক শব্দ নিয়ে গঠিত পূর্ণ অর্থবোধক ভাষিক একককে বাক্য বলে।

ব্যাকরণবিদদের মতে, বাক্য হলো এক বা একাধিক অর্থপূর্ণ শব্দের সমাহার যা সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করে। অর্থাৎ যে সুবিন্যাসটি পদসমষ্টি দ্বারা কোন বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় তাকে বাক্য বলে। বাক্য সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যক্তির মতামত নিম্নে দেওয়া হলো –

  • ডক্টর সুনীতি কুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, “পরস্পর অর্থসম্বন্ধবিশিষ্ট যে পথগুলো দ্বারা একটি সম্পূর্ণ ধারণা বা বক্তব্য বা ভাব প্রকাশ পায় সে পদ গুলোর সমষ্টিকে বাক্য বলে”।
  • পাণিনি: “কর্ম ধাতু ইতি বাক্যম্” (অর্থ: কর্ম এবং ধাতু মিলে বাক্য গঠিত হয়।)
  • ভর্তৃহরি: “শব্দাশ্রয়ঃ প্রকাশঃ” (অর্থ: শব্দের সমাহারে অর্থ প্রকাশ পায়।)
  • কৌটিল্য: “কর্ম-কারক-ভাবে-কৃতঃ শব্দঃ সর্বনাম-বিশেষণ-সমেতঃ বাক্যম্” (অর্থ: কর্ম, কারক, ভাব, শব্দ, সর্বনাম এবং বিশেষণের সমন্বয়ে বাক্য গঠিত হয়।)

দার্শনিকদের মতামত:

  • শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য: “অর্থপ্রকাশকঃ শব্দসমাহারঃ বাক্যম্” (অর্থ: অর্থ প্রকাশকারী শব্দের সমাহারকে বাক্য বলে।)
  • শঙ্করাচার্য: “যদর্থং বোধয়তি তৎ বাক্যম্” (অর্থ: যা অর্থ বোধায় তাকে বাক্য বলে।)

সাহিত্যিকদের মতামত:

  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: “বাক্য হল মনের ভাব প্রকাশের একক।”
  • মাইকেল মধুসূদন দত্ত: “বাক্য হল ভাব প্রকাশের অস্ত্র।”
  • কাজী নজরুল ইসলাম: “বাক্য হল চিন্তার প্রতিচ্ছবি।”

উদাহরণ:

  • ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। (এই বাক্যে “ঢাকা” কর্তা, “বাংলাদেশের রাজধানী” কর্ম এবং “হয়” ক্রিয়া।)
  • তুমি কি করছো? (এই বাক্যে “তুমি” কর্তা, “করছো” ক্রিয়া এবং “কি” প্রশ্নার্থক অব্যয়।)
  • দরজা বন্ধ করো। (এই বাক্যে “তুমি” (বোঝাই) কর্তা, “বন্ধ করো” ক্রিয়া এবং “দরজা” কর্ম।)
  • কাশি তুমি আমার বন্ধু হতো! (এই বাক্যে “তুমি” কর্তা, “হতো” ক্রিয়া এবং “কাশি” ইচ্ছাব্যঞ্জক অব্যয়।)
  • বাহ! কী সুন্দর দৃশ্য! (এই বাক্যে “দৃশ্য” কর্তা, “সুন্দর” বিশেষণ এবং “কী” বিস্ময়ার্থক অব্যয়।)

বাক্যের আরও কিছু উদাহরণ:

  • ছেলেটি খেলছে।
  • মেয়েটি পড়ছে।
  • আমি গান গাইছি।
  • তারা সিনেমা দেখছে।
  • আমরা ভ্রমণে যাচ্ছি।

বাক্য কত প্রকার ও কি কি? | বাক্যের প্রকারভেদ

সাধারণত বাক্যের প্রধান অংশ তিনটি। যথা – কর্তা, কর্ম ও ক্রিয়া। বাক্যের ক্রিয়াকে যে চালায়, সে হলো কর্তা। যাকে অবলম্বন করে ক্রিয়া সম্পাদিত হয় তাকে কর্ম বলে। আর বাক্যের মধ্যে যে অংশ দিয়ে কোন কিছু করা, ঘটা বা হওয়া বোঝাই তাকে ক্রিয়া বলে। যেমন: শাওন ও স্মরণ বই পড়ে। এখানে শাওন ও স্মরণ হলো কর্তা, বই হলো কর্ম আর পড়ে হলো ক্রিয়া।

বাক্য কত প্রকার ও কি কি
বাক্য কত প্রকার ও কি কি?

প্রতিটি বাক্যের প্রধানত দুটি অংশ থাকে। যথা:

  • উদ্দেশ্য
  • বিধেয়

উদ্দেশ্য

বাক্যের যে অংশে কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয়ে থাকে তাকে উদ্দেশ্য বলে। যেমন – রহিম বল খেলছে। সীমা বই পড়তেছে। এখানে বাক্য দুটির মাঝে ‘রহিম‘ এবং ‘সীমা‘ হলো উদ্দেশ্য।

বিধেয়

উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয় তাকে বিধেয় বলে। যেমন – করিম ক্রিকেট খেলছে। আসিফ বই পড়তেছে। বাক্য দুটির মাঝে ‘ক্রিকেট খেলছে‘ এবং ‘বই পড়তেছে‘ হলো বিধেয়।

বাক্যের বিধেয় অংশের ক্রিয়া থাকা না থাকা বিবেচনায় বাক্যকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা – সক্রিয় বাক্য ও অক্রিয় বাক্য

সক্রিয় বাক্য

যেসব বাক্যের বিধলয় অংশের ক্রিয়া থাকে, সেগুলোকে সক্রিয় বাক্য বলে। যেমন – আমার মা চাকরি করেন।

অক্রিয় বাক্য

যেসব বাক্যের বিধলয় অংশের ক্রিয়া থাকে না, সেগুলোকে অক্রিয় বাক্য বলে। যেমন – তিনি বাংলাদেশের নাগরিক।

গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ লিখ

গঠন অনুসারে বাক্য তিন প্রকার। যথা –

  • সরল বাক্য
  • মিশ্র বা জটিল বাক্য
  • যৌগিক বাক্য

সরল বাক্য

সরল বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে একটি মাত্র কর্তা এবং একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং আরও কোনো বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।

উদাহরণ:

  • ছেলেটি বই পড়ছে।
  • মেয়েটি গান গাইছে।
  • সূর্য উঠেছে।
  • পাখি উড়ছে।
  • ফুল ফুটেছে।

সরল বাক্যের বৈশিষ্ট্য:

  • একটি কর্তা থাকে।
  • একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে।
  • সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
  • আরও কোনো বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।

মিশ্র বা জটিল বাক্য

জটিল বা মিশ্র বাক্য হলো যে বাক্যে একটি স্বাধীন বাক্য এবং এক বা একাধিক অধীন বাক্য পরস্পর সাপেক্ষভাবে ব্যবহৃত হয়। অন্য কথায়, জটিল বাক্যে একাধিক বাক্য থাকে যেখানে একটি বাক্য অন্য বাক্যের উপর নির্ভর করে।

মিশ্র বা জটিল বাক্যের উদাহরণ:

১. যখন বৃষ্টি হবে, তখন আমরা ঘরে বসে গল্প করবো।

এই বাক্যটিতে দুটি বাক্য রয়েছে:

  • প্রধান বাক্য: “আমরা ঘরে বসে গল্প করবো।”
  • অধীন বাক্য: “যখন বৃষ্টি হবে।”

সংযোজক শব্দ “যখন” প্রধান বাক্য এবং অধীন বাক্যকে যুক্ত করেছে। অধীন বাক্যটি “আমরা ঘরে বসে গল্প করবো” এই প্রধান বাক্যের সময় নির্ধারণ করে।

২. যেখানে ইচ্ছা, সেখানে উপায়।

এই বাক্যটিতেও দুটি বাক্য রয়েছে:

  • প্রধান বাক্য: “সেখানে উপায়।”
  • অধীন বাক্য: “যেখানে ইচ্ছা।”

সংযোজক শব্দ “যেখানে” প্রধান বাক্য এবং অধীন বাক্যকে যুক্ত করেছে। অধীন বাক্যটি “সেখানে উপায়” এই প্রধান বাক্যের শর্ত নির্ধারণ করে।

৩. যিনি পরের উপকার করেন, তাঁকে সবাই শ্রদ্ধা করে।

এই বাক্যটিতেও দুটি বাক্য রয়েছে:

  • প্রধান বাক্য: “সবাই শ্রদ্ধা করে।”
  • অধীন বাক্য: “যিনি পরের উপকার করেন।”

সংযোজক শব্দ “যিনি” প্রধান বাক্য এবং অধীন বাক্যকে যুক্ত করেছে। অধীন বাক্যটি “সবাই শ্রদ্ধা করে” এই প্রধান বাক্যের কর্তা নির্ধারণ করে।

আরও কিছু উদাহরণ:

  • যে দেশের মানুষ শিক্ষিত, সেই দেশ উন্নত।
  • যদি আমরা পরিশ্রম করি, তাহলে অবশ্যই সফল হব।
  • যেহেতু বিকেল হয়ে গেছে, তাই আমরা বাড়ি ফিরি।
  • যারা সত্যবাদী, তাদের সবাই সম্মান করে।
  • যেখানে নিয়ম নেই, সেখানে অরাজকতা বিরাজ করে।

মিশ্র বা জটিল বাক্যের বৈশিষ্ট্য:

  • জটিল বাক্যে একটি প্রধান বাক্য এবং এক বা একাধিক অধীন বাক্য থাকে।
  • প্রধান বাক্য স্বাধীনভাবে সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
  • অধীন বাক্য প্রধান বাক্যের উপর নির্ভর করে এবং এর অর্থ সম্পূর্ণ হয় না।
  • সংযোজক শব্দ ব্যবহার করে প্রধান বাক্য এবং অধীন বাক্যকে যুক্ত করা হয়। যেমন: যখন, যদি, কারণ, যেখানে, যাতে, ইত্যাদি।

জটিল বাক্যের গুরুত্ব:

  • জটিল বাক্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের ভাব প্রকাশকে আরও স্পষ্ট, সুন্দর এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি।
  • জটিল বাক্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের লেখার ধরনকে আরও উন্নত করতে পারি।
  • জটিল বাক্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের জ্ঞান এবং বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে পারি।

যৌগিক বাক্য

যৌগিক বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে দুটি বা ততোধিক স্বাধীন বাক্য সংযোজক শব্দ ব্যবহার করে যুক্ত থাকে। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং একে অপরের উপর নির্ভরশীল নয়।

যৌগিক বাক্যের উদাহরণ:

১. সীমা বই পড়ছে আর হাবিব ঘর গোছাচ্ছে।

এই বাক্যটিতে দুটি স্বাধীন বাক্য রয়েছে:

  • প্রথম বাক্য: “সীমা বই পড়ছে।”
  • দ্বিতীয় বাক্য: “হাবিব ঘর গোছাচ্ছে।”

সংযোজক শব্দ “আর” দুটি বাক্যকে যুক্ত করেছে। এই দুটি বাক্যই সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং একে অপরের উপর নির্ভরশীল নয়।

২. আমি বাংলায় কথা বলতে পারি, কিন্তু ইংরেজিতে (কথা বলতে) তেমন পারি না।

এই বাক্যটিতেও দুটি স্বাধীন বাক্য রয়েছে:

  • প্রথম বাক্য: “আমি বাংলায় কথা বলতে পারি।”
  • দ্বিতীয় বাক্য: “ইংরেজিতে তেমন পারি না।”

সংযোজক শব্দ “কিন্তু” দুটি বাক্যকে যুক্ত করেছে। এই দুটি বাক্যই সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং একে অপরের বিপরীত অর্থ বহন করে।

৩. বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, তাই আমরা ছাতা নিয়ে বের হব।

এই বাক্যটিতেও দুটি স্বাধীন বাক্য রয়েছে:

  • প্রথম বাক্য: “বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।”
  • দ্বিতীয় বাক্য: “তাই আমরা ছাতা নিয়ে বের হব।”

সংযোজক শব্দ “তাই” দুটি বাক্যকে যুক্ত করেছে। প্রথম বাক্যটি কারণ এবং দ্বিতীয় বাক্যটি ফলাফল প্রকাশ করে।

আরও কিছু উদাহরণ:

  • রাস্তাঘাট ভিড় হয়েছে, তাই আমরা ট্রেনে যাব।
  • সে গান গাইতে পারে, নাচতে পারে, আঁকতেও পারে।
  • সত্যবাদী বলেই, তাকে সকলে বিশ্বাস করে।
  • ছেলেটি গরিব কিন্তু সৎ।

যৌগিক বাক্যের বৈশিষ্ট্য:

  • দুটি বা ততোধিক স্বাধীন বাক্য থাকে।
  • সংযোজক শব্দ ব্যবহার করে বাক্যগুলো যুক্ত থাকে।
  • প্রতিটি বাক্যই সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
  • বাক্যগুলো একে অপরের উপর নির্ভরশীল নয়।

সংযোজক শব্দের প্রকারভেদ:

  • যোজক: এবং, কিন্তু, অথচ, ইত্যাদি।
  • বিরোধী: তবে, কিন্তু, বরং, ইত্যাদি।
  • সময়: যখন, তখন, আগে, পরে, ইত্যাদি।
  • কারণ: কারণ, যেহেতু, তাই, ইত্যাদি।
  • শর্ত: যদি, তাহলে, নতুবা, ইত্যাদি।
  • উদ্দেশ্য: যাতে, যেন, ইত্যাদি।
  • উপায়: দিয়ে, দ্বারা, ইত্যাদি।
  • তুলনা: যেমন, তার চেয়ে, ইত্যাদি।

যৌগিক বাক্যের গুরুত্ব:

  • যৌগিক বাক্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের ভাব প্রকাশকে আরও স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত এবং সুন্দর করে তুলতে পারি।
  • যৌগিক বাক্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের লেখার ধরনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি।
  • যৌগিক বাক্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের জ্ঞান এবং বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে পারি।

অর্থ অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ দাও

অর্থ অনুসারে বাক্য ৫ প্রকার। এগুলো হলো –

  • নির্দেশক বাক্য
  • প্রশ্নবোধক বাক্য
  • অনুজ্ঞাসূচক বাক্য
  • বিস্ময়সূচক বাক্য
  •  প্রার্থনা সূচক বাক্য

নির্দেশক বাক্য / বিবৃতিমূলক বা বর্ণনামূলক বাক্য

যে বাক্যে কোন কিছুকে সাধারণভাবে বর্ণনা করা হয়  তাকে বিবৃতিমূলক বাক্য বলে। নির্দেশক বাক্যকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

  •  হ্যাঁ বোধক /  অস্তিবাচক
  •  না  বোধক /  নেতিবাচক

বিবৃতিমূলক বা বর্ননামূলক বা নির্দেশক বাক্যের উদাহরণ –

  • এখান থেকে যাও (নির্দেশাত্মক)
  • আমি ভাত খাই (বিবৃতিমূলক)
  • সে ঢাকা যাবে (হ্যাঁ বাচক)
  • আমি বলতে চাই না (না বাচক)
  • আমরা রোজ বেড়াতে যেতাম।
  • তারা তোমাদের ভুলেনি।

প্রশ্নবোধক বাক্য

প্রশ্নবোধক বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে কোনো প্রশ্ন করা হয়। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।

প্রশ্নবোধক বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) ব্যবহার করা হয়।

উদাহরণ:

  • তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?
  • সে কি এসেছে?
  • কখন বৃষ্টি হবে?
  • কোথায় যাচ্ছো?
  • তোমার নাম কী?

প্রশ্নবোধক বাক্যের বৈশিষ্ট্য:

  • কোনো প্রশ্ন করা হয়।
  • সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
  • কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।
  • শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্নবোধক বাক্যের গুরুত্ব:

  • প্রশ্নবোধক বাক্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে পারি।
  • প্রশ্নবোধক বাক্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করতে পারি।
  • প্রশ্নবোধক বাক্য ব্যবহার করে আমরা অন্যদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি।

অনুজ্ঞাসূচক বাক্য

অনুজ্ঞাসূচক বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে কোনো আদেশ, অনুরোধ, নিষেধ, অনুমতি, উপদেশ, ইত্যাদি প্রকাশ করা হয়। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।

উদাহরণ:

  • দরজা বন্ধ করো। (আদেশ)
  • আমাকে একটু পানি দাও। (অনুরোধ)
  • এখানে আসো না। (নিষেধ)
  • তুমি যাও। (অনুমতি)
  • পড়াশোনা ভালোভাবে করো। (উপদেশ)

অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের বৈশিষ্ট্য:

  • কোনো আদেশ, অনুরোধ, নিষেধ, অনুমতি, উপদেশ, ইত্যাদি প্রকাশ করে।
  • সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
  • কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।

অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের প্রকারভেদ:

  • আদেশাত্মক বাক্য: যেখানে কোনো কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
  • প্রার্থনামূলক বাক্য: যেখানে কোনো অনুরোধ করা হয়।
  • নিষেধাত্মক বাক্য: যেখানে কোনো কাজ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
  • অনুমতিমূলক বাক্য: যেখানে কোনো কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়।
  • উপদেশাত্মক বাক্য: যেখানে কোনো কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের গুরুত্ব:

  • অনুজ্ঞাসূচক বাক্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের চারপাশের মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি।
  • অনুজ্ঞাসূচক বাক্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের কাজকর্ম পরিচালনা করতে পারি।
  • অনুজ্ঞাসূচক বাক্য ব্যবহার করে আমরা অন্যদেরকে সাহায্য করতে পারি।

বিস্ময়সূচক বাক্য

বিস্ময়সূচক বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে কোনো আকস্মিক ঘটনা, বিস্ময়, আনন্দ, দুঃখ, ভয়, রাগ, ইত্যাদি প্রকাশ করা হয়। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।

বিস্ময়সূচক বাক্যের শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন (!) ব্যবহার করা হয়।

উদাহরণ:

  • ওমা! এত সুন্দর! (বিস্ময়)
  • হুররে! আমরা জিতে গেছি! (আনন্দ)
  • হায়! আমার বই হারিয়ে গেছে! (দুঃখ)
  • ধিক! তুমি এটা করতে পারো না! (রাগ)
  • ভয় পেও না! আমি তোমার পাশে আছি। (ভয়)

বিস্ময়সূচক বাক্যের বৈশিষ্ট্য:

  • কোনো আকস্মিক ঘটনা, বিস্ময়, আনন্দ, দুঃখ, ভয়, রাগ, ইত্যাদি প্রকাশ করে।
  • সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
  • কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।
  • শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন (!) ব্যবহার করা হয়।

বিস্ময়সূচক বাক্যের প্রকারভেদ:

  • আবেগ প্রকাশক বাক্য: যেখানে কোনো আবেগ প্রকাশ করা হয়।
  • আকস্মিক ঘটনা বর্ণনাকারী বাক্য: যেখানে কোনো আকস্মিক ঘটনা বর্ণনা করা হয়।
  • বিস্ময় প্রকাশক বাক্য: যেখানে কোনো বিস্ময় প্রকাশ করা হয়।

বিস্ময়সূচক বাক্যের গুরুত্ব:

  • বিস্ময়সূচক বাক্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের আবেগ প্রকাশ করতে পারি।
  • বিস্ময়সূচক বাক্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের ভাব প্রকাশকে আরও স্পষ্ট ও তীব্র করে তুলতে পারি।
  • বিস্ময়সূচক বাক্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের লেখার ধরনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি।

প্রার্থনা সূচক বাক্য

প্রার্থনা সূচক বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে ঈশ্বরের কাছে কোনো আকাঙ্ক্ষা, অনুরোধ, প্রার্থনা, ইত্যাদি প্রকাশ করা হয়। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।

প্রার্থনা সূচক বাক্যের শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন (!) বা প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) ব্যবহার করা হয়।

উদাহরণ:

  • হে ঈশ্বর! আমাদের রক্ষা করো! (প্রার্থনা)
  • ওহে প্রভু! আমাদের পাপ ক্ষমা করো! (ক্ষমা প্রার্থনা)
  • দয়া করে আমাকে সাহায্য করো! (অনুরোধ)
  • আমি কি কখনো সুখী হতে পারবো? (আকাঙ্ক্ষা)

প্রার্থনা সূচক বাক্যের বৈশিষ্ট্য:

  • ঈশ্বরের কাছে কোনো আকাঙ্ক্ষা, অনুরোধ, প্রার্থনা, ইত্যাদি প্রকাশ করে।
  • সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
  • কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।
  • শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন (!) বা প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) ব্যবহার করা হয়।

প্রার্থনা সূচক বাক্যের প্রকারভেদ:

  • নিবেদনমূলক বাক্য: যেখানে ঈশ্বরের প্রতি নিবেদন করা হয়।
  • ক্ষমা প্রার্থনামূলক বাক্য: যেখানে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।
  • সাহায্য প্রার্থনামূলক বাক্য: যেখানে ঈশ্বরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়।
  • আকাঙ্ক্ষা প্রকাশক বাক্য: যেখানে ঈশ্বরের কাছে কোনো আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা হয়।

প্রার্থনা সূচক বাক্যের গুরুত্ব:

  • প্রার্থনা সূচক বাক্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস প্রকাশ করতে পারি।
  • প্রার্থনা সূচক বাক্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণ করতে পারি।
  • প্রার্থনা সূচক বাক্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের জীবনে শান্তি ও সুখ লাভ করতে পারি।

একটি সার্থক বাক্যের কয়টি গুণ থাকা আবশ্যক? | গুণ অনুসারে বাক্য

একটি সার্থক বাক্যের তিনটি গুণ থাকা আবশ্যক। যথাঃ

  • আকাঙ্ক্ষা
  •  আসত্তি
  •  যোগ্যতা

আকাঙ্ক্ষা

বাক্যের অর্থ পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য এক পদের পর অন্য পদ শলনার যে ইচ্ছা, তাই আকাঙ্ক্ষা। যেমন – চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে………। এটি অসম্পূর্ণ বাক্য। এখানে আরও কিছু শোনার ইচ্ছা থাকে। কিন্তু ‘চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে।’ এটি বললে আকাঙ্ক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটে।

আসত্তি

বাক্যের অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য সুশৃংখল পদবিন্যাসই আসত্তি। যেমন- স্কুলে আমি খেয়ে যাব ভাত। সঠিকভাবে বিন্যস্ত না হওয়ায় বক্তার মনোভাব স্পষ্ট বোঝা যায় না। কিন্তু ‘আমি ভাত খেয়ে স্কুলে যাব’ বললে বক্তার মনোভাব সম্পন্নভাবে প্রকাশ পায়। সুতরাং বাক্যটি আসত্তিসম্পন্ন।

যোগ্যতা

বাক্যস্থিত পদসমূহের অন্তগত এবং ভাবগত মিলবন্ধনের নাম যোগ্যতা। যেমন – বর্ষার বৃষ্টিতে প্লাবনের সৃষ্টি হয়। এটি একটি যোগ্যতা সম্পন্ন বাক্য। কিন্তু ‘বর্ষার রৌদ্র প্লাবনের সৃষ্টি করে’ এটি ভাবপ্রকাশের যোগ্যতা হারিয়েছে। কারণ, রোদ্র প্লাবনের সৃষ্টি করে না। শব্দের যোগ্যতার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জড়িত থাকে।

  • রীতিসিদ্ধ অর্থবাচকতা
  • দুর্বোধ্যতা
  • উপমার ভুল প্রয়োগ
  • বাহুল্য দোষ
  • বাগধারা শব্দ পরিবর্তন
  • গুরুচণ্ডালী দোষ ইত্যাদি

পদ নিয়ে বিস্তারিতঃ পদ কাকে বলে? পদ কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ দাও

বাক্য নিয়ে বিগত সালের চাকরির পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ MCQ

১. বাক্যের ক্ষুদ্রতম একক কি? বাক্যের একক কোনটি?

  • শব্দ
  • পদ
  • আশ্রিত খন্ড বাক্য
  • ধ্বনী

২. বাসার মূল উপকরণ কি?

  • শব্দ
  • বাক্য
  • বর্ণ
  • ধ্বনি

৩. বাক্যের তিনটি গুন কী কী?

  • আকাঙ্ক্ষা আসক্তি যোগ্যতা
  • আকাঙ্ক্ষা, আসত্তি, যোগ্যতা
  • যোগ্যতা, উদ্দেশ্য, বিধেয়
  • কোনটিই নয়

৪. প্রতিটি বাক্যে প্রধান কয়টি অংশ থাকে?

৫. গুরুচণ্ডালী দোষমুক্ত কোনটি?

  • শবপুরা
  • মরাদেহ
  • শবদাহ
  • শবমড়া

৬. গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার?

  • দুই প্রকার
  • তিন প্রকার
  • পাঁচ প্রকার
  • ছয় প্রকার

৭. অর্থ অনুসারে শব্দ কত প্রকার?

  • তিন প্রকার
  • চার প্রকার
  • পাঁচ প্রকার
  • ছয় প্রকার

৮. একটি সার্থক বাক্যের কয়টি গুণ থাকা আবশ্যক?

  • দুইটি
  • তিনটি
  • চারটি
  • পাঁচটি

৯. ভাষার বৃহত্তম একক কোনটি?

  • বাক্য
  • শব্দ
  • ধ্বনি
  • বর্ণ

১০. ভাষার ছাদ বলা হয় কাকে?

  • শব্দ
  • বাক্য
  • বর্ণ
  • ধ্বনি

বাংলা ব্যাকরণ সম্পর্কে আরও জানতে নিচের আর্টিকেল দুটি পড়তে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top