পৃথিবীর সবকিছুই কোন না কোন পদার্থ দিয়ে তৈরি। আমাদের আশে পাশে থাকা সকল দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান বস্তু যেমন – আগুন, পানি, মাটি, বায়ু, সোনা, পাথর, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি সবকিছুই পদার্থ দিয়ে তৈরি। তাই পদার্থ কাকে বলে? পদার্থ কত প্রকার ও কি কি? বৈশিষ্ট্য, ব্যাখ্যা, পদার্থের গঠন ইত্যাদি সম্পর্কে সকলেরই জানা উচিত।
Table of contents
- পদার্থ কাকে বলে? পদার্থ কি?
- পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- পদার্থ কত প্রকার ও কি কি? | পদার্থের প্রকারভেদ
- কঠিন পদার্থ কাকে বলে? কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- তরল পদার্থ কাকে বলে? তরল পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- বায়বীয় বা গ্যাসীয় পদার্থ কাকে বলে? বায়বীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- পদার্থের গঠন
- মৌলিক পদার্থ কাকে বলে? মৌলিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- যৌগিক পদার্থ কাকে বলে? যৌগিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- পদার্থ বিজ্ঞান কাকে বলে? পদার্থ বিজ্ঞানের সংঙ্গা
- আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের জনক কে?
- সকল প্রকার পদার্থের সংঙ্গা
- বিশুদ্ধ পদার্থ কাকে বলে?
- অবিশুদ্ধ পদার্থ কাকে বলে?
- খনিজ পদার্থ কাকে বলে?
- অর্ধ পরিবাহী পদার্থ কাকে বলে?
- পরিবাহী পদার্থ কাকে বলে?
- অচৌম্বক পদার্থ কাকে বলে?
- চৌম্বক পদার্থ কাকে বলে?
- সেকেন্ডারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ কাকে বলে?
- প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ কাকে বলে?
- জারক পদার্থ কাকে বলে?
- দাহ্য পদার্থ কাকে বলে?
- তেজস্ক্রিয় পদার্থ কাকে বলে?
- অজৈব পদার্থ কাকে বলে?
- জৈব পদার্থ কাকে বলে?
- উদ্বায়ী পদার্থ কাকে বলে?
পদার্থ কাকে বলে? পদার্থ কি?
পদার্থ বলতে বোঝায় এমন কিছু যার ভর এবং আয়তন আছে এবং স্থান দখল করে।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, আমরা যা স্পর্শ করতে পারি, দেখতে পারি, অনুভব করতে পারি, যার ওজন আছে, তাকেই পদার্থ বলে।
উদাহরণ:
- চেয়ার, টেবিল, বই, কলম, ইত্যাদি।
- পানি, বাতাস, আগুন, ধোঁয়া, ইত্যাদি।
- আমাদের শরীর, গাছপালা, প্রাণী, ইত্যাদি।
পদার্থের বৈশিষ্ট্য
পদার্থের বৈশিষ্ট্য হলো সেইসব গুণাবলী যা পদার্থকে অন্য পদার্থ থেকে আলাদা করে। পদার্থের বৈশিষ্ট্য দুইভাগে ভাগ করা যায়:
1. ভৌত বৈশিষ্ট্য:
- আকার: পদার্থের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা।
- আকৃতি: পদার্থের বাইরের অংশের রূপ।
- ভর: পদার্থের জড়তা।
- আয়তন: পদার্থ যে পরিমাণ স্থান দখল করে।
- ঘনত্ব: একক আয়তনের ভর।
- গলনাঙ্ক: যে তাপমাত্রায় পদার্থ কঠিন থেকে তরলে পরিণত হয়।
- স্ফুটনাঙ্ক: যে তাপমাত্রায় পদার্থ তরল থেকে বায়বীয় অবস্থায় পরিণত হয়।
- গতিশীলতা: পদার্থের স্থানান্তরিত হওয়ার ক্ষমতা।
- প্রতিসার্যতা: পদার্থের টান বা চাপ সহ্য করার ক্ষমতা।
- কঠোরতা: পদার্থের বিকৃত হওয়ার প্রতিরোধ ক্ষমতা।
- বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা: পদার্থের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার ক্ষমতা।
- তাপ পরিবাহিতা: পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ প্রবাহিত হওয়ার ক্ষমতা।
- আলোক পরিবাহিতা: পদার্থের মধ্য দিয়ে আলো প্রবাহিত হওয়ার ক্ষমতা।
2. রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য:
- রাসায়নিক বিক্রিয়া করার ক্ষমতা: পদার্থের অন্য পদার্থের সাথে যুক্ত হয়ে নতুন পদার্থ তৈরি করার ক্ষমতা।
- জ্বলনশীলতা: পদার্থের আগুন ধরে জ্বলার ক্ষমতা।
- অম্লতা বা ক্ষারতা: পদার্থের অম্ল বা ক্ষার গঠনের ক্ষমতা।
- দ্রাব্যতা: পদার্থের অন্য পদার্থের মধ্যে দ্রবীভূত হওয়ার ক্ষমতা।
- ক্ষয়প্রতিরোধ ক্ষমতা: পদার্থের বায়ু, পানি বা অন্য রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে ক্ষয় হওয়ার প্রতিরোধ ক্ষমতা।
পদার্থের বৈশিষ্ট্যের গুরুত্ব:
- পদার্থের বৈশিষ্ট্য আমাদেরকে পদার্থকে চিহ্নিত করতে এবং অন্য পদার্থ থেকে আলাদা করতে সাহায্য করে।
- পদার্থের বৈশিষ্ট্য আমাদেরকে পদার্থের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেয়।
- পদার্থের বৈশিষ্ট্য আমাদেরকে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া বুঝতে সাহায্য করে।
- পদার্থের বৈশিষ্ট্য আমাদেরকে নতুন পদার্থ আবিষ্কার করতে সাহায্য করে।
পদার্থ কত প্রকার ও কি কি? | পদার্থের প্রকারভেদ
অবস্থাভেদে পদার্থকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো-
- কঠিন পদার্থ
- তরল পদার্থ
- বায়বীয় / গ্যাসীয় পদার্থ
উৎপাদনভেদে পদার্থ আবার দুই প্রকার। যথা:
- মৌলিক পদার্থ
- যৌগিক পদার্থ
কঠিন পদার্থ কাকে বলে? কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্য
কঠিন পদার্থ হলো এমন পদার্থ যার নির্দিষ্ট আকার এবং আকৃতি থাকে এবং সহজে স্থানান্তরিত করা যায় না। কঠিন পদার্থের কণাগুলো একে অপরের সাথে শক্তভাবে আবদ্ধ থাকে।
কঠিন পদার্থের কিছু বৈশিষ্ট্য:
- নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি: কঠিন পদার্থের নিজস্ব অনন্য আকার এবং আকৃতি থাকে।
- স্থানান্তরের প্রতিরোধ: কঠিন পদার্থ সহজে স্থানান্তরিত করা যায় না।
- কঠোরতা: কঠিন পদার্থের কণাগুলো একে অপরের সাথে শক্তভাবে আবদ্ধ থাকে, যার ফলে এগুলো কঠোর হয়।
- আকৃতি ধরে রাখার ক্ষমতা: কঠিন পদার্থের নিজস্ব আকৃতি দীর্ঘ সময় ধরে ধরে রাখতে পারে।
কঠিন পদার্থের কিছু উদাহরণ:
- ধাতু: লোহা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম, ইত্যাদি।
- খনিজ: পাথর, মার্বেল, গ্রানাইট, ইত্যাদি।
- কাঠ: শাল, মহগনি, চিংড়ি, ইত্যাদি।
- কাচ: জানালায় ব্যবহৃত কাচ, বোতল, ইত্যাদি।
- প্লাস্টিক: পলিথিন, পিভিসি, পেট, ইত্যাদি।
কঠিন পদার্থের ব্যবহার:
- নির্মাণ: ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, সেতু, ইত্যাদি নির্মাণে কঠিন পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
- যানবাহন: গাড়ি, মোটরসাইকেল, বিমান, ইত্যাদি তৈরিতে কঠিন পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
- ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি: কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, ইত্যাদি তৈরিতে কঠিন পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
- ঘরবাড়ির সাজসজ্জা: টেবিল, চেয়ার, বিছানা, ইত্যাদি তৈরিতে কঠিন পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
- খেলাধুলার সরঞ্জাম: ব্যাট, বল, র্যাকেট, ইত্যাদি তৈরিতে কঠিন পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
কঠিন পদার্থ সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য:
- কঠিন পদার্থের ঘনত্ব তরল এবং বায়বীয় পদার্থের তুলনায় বেশি।
- কঠিন পদার্থের তাপ পরিবাহিতা তরল এবং বায়বীয় পদার্থের তুলনায় বেশি।
- কঠিন পদার্থের তাপ প্রসারণ তরল এবং বায়বীয় পদার্থের তুলনায় কম।
- কঠিন পদার্থের শব্দ তরঙ্গ তরল এবং বায়বীয় পদার্থের তুলনায় দ্রুত গতিতে প্রবাহিত হয়।
তরল পদার্থ কাকে বলে? তরল পদার্থের বৈশিষ্ট্য
তরল পদার্থ হলো এমন পদার্থ যার নির্দিষ্ট আয়তন থাকে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার থাকে না। তরল পদার্থ সহজে প্রবাহিত হয় এবং যে পাত্রে রাখা হয় তার আকৃতি ধারণ করে। তরল পদার্থের কণাগুলো একে অপরের সাথে কম শক্তভাবে আবদ্ধ থাকে।
তরল পদার্থের কিছু বৈশিষ্ট্য:
- নির্দিষ্ট আয়তন: তরল পদার্থের নির্দিষ্ট স্থান থাকে।
- নির্দিষ্ট আকারের অভাব: তরল পদার্থের নিজস্ব অনন্য আকৃতি থাকে না।
- প্রবাহিতা: তরল পদার্থ সহজে প্রবাহিত হয়।
- আকৃতি ধারণের ক্ষমতা: তরল পদার্থ যে পাত্রে রাখা হয় তার আকৃতি ধারণ করে।
- সংকুচনশীলতা: তরল পদার্থ কম পরিমাণে সংকুচিত হতে পারে।
তরল পদার্থের কিছু উদাহরণ:
- পানি: সাগর, নদী, হ্রদ, ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।
- তেল: রান্নার তেল, খনিজ তেল, ইত্যাদি।
- রক্ত: মানুষ ও প্রাণীর শরীরে পাওয়া যায়।
- পেট্রোল: গাড়ির ইঞ্জিন চালানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
- মদ: ওয়াইন, বিয়ার, স্পিরিট, ইত্যাদি।
তরল পদার্থের ব্যবহার:
- পানীয়: পানি, জুস, দুধ, ইত্যাদি পান করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- স্বাস্থ্যসেবা: ওষুধ, রক্ত, টিকা, ইত্যাদি তরল আকারে ব্যবহার করা হয়।
- পরিবহন: জাহাজ, নৌকা, সাবমেরিন, ইত্যাদি জলপথে পরিবহনের জন্য তরল পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
- খাদ্য: স্যুপ, গ্রেভি, জ্যাম, ইত্যাদি তরল পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয়।
- শিল্প: রঙ, কাগজ, প্লাস্টিক, ইত্যাদি তৈরিতে তরল পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
তরল পদার্থ সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য:
- তরল পদার্থের ঘনত্ব কঠিন পদার্থের তুলনায় কম কিন্তু বায়বীয় পদার্থের তুলনায় বেশি।
- তরল পদার্থের তাপ পরিবাহিতা কঠিন পদার্থের তুলনায় কম কিন্তু বায়বীয় পদার্থের তুলনায় বেশি।
- তরল পদার্থের তাপ প্রসারণ কঠিন পদার্থের তুলনায় বেশি কিন্তু বায়বীয় পদার্থের তুলনায় কম।
- তরল পদার্থের শব্দ তরঙ্গ কঠিন পদার্থের তুলনায় দ্রুত গতিতে প্রবাহিত হয় কিন্তু বায়বীয় পদার্থের তুলনায় ধীর গতিতে প্রবাহিত হয়।
বায়বীয় বা গ্যাসীয় পদার্থ কাকে বলে? বায়বীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য
বায়বীয় পদার্থ হলো এমন পদার্থ যার নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন থাকে না। বায়বীয় পদার্থ সহজে প্রসারিত হয় এবং যে পাত্রে রাখা হয় তার সমস্ত স্থান দখল করে। বায়বীয় পদার্থের কণাগুলো একে অপরের সাথে অত্যন্ত কম শক্তভাবে আবদ্ধ থাকে।
বায়বীয় পদার্থের কিছু বৈশিষ্ট্য:
- নির্দিষ্ট আকার ও আয়তনের অভাব: বায়বীয় পদার্থের নিজস্ব অনন্য আকৃতি বা আয়তন থাকে না।
- প্রসারণ: বায়বীয় পদার্থ সহজে প্রসারিত হয় এবং যে পাত্রে রাখা হয় তার সমস্ত স্থান দখল করে।
- কম ঘনত্ব: বায়বীয় পদার্থের ঘনত্ব কঠিন এবং তরল পদার্থের তুলনায় অনেক কম।
- উচ্চ সংকুচনশীলতা: বায়বীয় পদার্থ অনেক বেশি পরিমাণে সংকুচিত হতে পারে।
বায়বীয় পদার্থের কিছু উদাহরণ:
- বাতাস: আমরা যে বাতাস শ্বাস নিই তা বায়বীয় পদার্থ।
- অক্সিজেন: জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি বায়ু।
- হাইড্রোজেন: পানির একটি উপাদান।
- কার্বন ডাই অক্সাইড: শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বেরিয়ে আসা একটি বায়ু।
- মিথেন: প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি উপাদান।
বায়বীয় পদার্থের ব্যবহার:
- শ্বাস-প্রশ্বাস: জীবন্ত প্রাণী শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বায়ু ব্যবহার করে।
- দাহ: জ্বালানী দহনের জন্য বায়ু ব্যবহার করা হয়।
- শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ: শীতাতপ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্রগুলিতে বায়ু ব্যবহার করা হয়।
- বিদ্যুৎ উৎপাদন: বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বায়ু ব্যবহার করা হয়।
- পরিবহন: বিমান, গাড়ি, মোটরসাইকেল ইত্যাদি চালানোর জন্য বায়ু ব্যবহার করা হয়।
বায়বীয় পদার্থ সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য:
- বায়বীয় পদার্থের তাপ পরিবাহিতা কঠিন এবং তরল পদার্থের তুলনায় কম।
- বায়বীয় পদার্থের তাপ প্রসারণ কঠিন এবং তরল পদার্থের তুলনায় বেশি।
- বায়বীয় পদার্থের শব্দ তরঙ্গ কঠিন এবং তরল পদার্থের তুলনায় ধীর গতিতে প্রবাহিত হয়।
পদার্থের গঠন
প্রতিটি পদার্থ কয়েকটি মূল কণিকার মধ্যমে গঠিত হয়। এ সকল মৌলিক কণিকাগুলো হলো:
- ইলেকট্রন (Electron)
- প্রোটন (Proton)
- নিউট্রন (Neutron)
ইলেকট্রন:
- পরিমাণ: ঋণাত্মক বিদ্যুৎ আধান (-1e) ধারণ করে।
- ভর: প্রোটনের প্রায় 1/2000 ভাগ।
- অবস্থান: পরমাণুর কেন্দ্রকের (nucleus) চারপাশে ঘোরে।
- গঠন: মৌলিক কণা, অর্থাৎ আরও ভাঙা যায় না।
- বৈশিষ্ট্য:
- বিদ্যুৎ প্রবাহ পরিচালনা করে।
- রাসায়নিক বন্ধন তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
- আলো নির্গমন করে।
প্রোটন:
- পরিমাণ: ধনাত্মক বিদ্যুৎ আধান (+1e) ধারণ করে।
- ভর: ইলেকট্রনের প্রায় 2000 ভাগের 1 ভাগ।
- অবস্থান: পরমাণুর কেন্দ্রকে (nucleus) গঠন করে।
- গঠন: মৌলিক কণা, অর্থাৎ আরও ভাঙা যায় না।
- বৈশিষ্ট্য:
- পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা নির্ধারণ করে।
- নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে।
নিউট্রন:
- পরিমাণ: নিরপেক্ষ, কোন বিদ্যুৎ আধান নেই (0e)।
- ভর: প্রোটনের প্রায় সমান।
- অবস্থান: পরমাণুর কেন্দ্রকে (nucleus) গঠন করে।
- গঠন: মৌলিক কণা, অর্থাৎ আরও ভাঙা যায় না।
- বৈশিষ্ট্য:
- পরমাণুর পারমাণবিক ভর নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।
- নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে।
এই তিনটি কণা মিলে পরমাণু গঠন করে:
- পারমাণবিক সংখ্যা: প্রোটনের সংখ্যা।
- পারমাণবিক ভর: প্রোটন ও নিউট্রনের সংখ্যার যোগফল।
- আইসোটোপ: একই পারমাণবিক সংখ্যা কিন্তু ভিন্ন পারমাণবিক ভর।
উদাহরণ:
- হাইড্রোজেনের সবচেয়ে সাধারণ আইসোটোপে 1টি প্রোটন এবং 0টি নিউট্রন থাকে।
- অক্সিজেনের সবচেয়ে সাধারণ আইসোটোপে 8টি প্রোটন এবং 8টি নিউট্রন থাকে।
মৌলিক পদার্থ কাকে বলে? মৌলিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য
মৌলিক পদার্থ হলো এমন পদার্থ যা আরও ভাঙা যায় না। মৌলিক পদার্থের পরমাণুতে একই রকমের প্রোটন থাকে।
মৌলিক পদার্থের কিছু বৈশিষ্ট্য:
- নির্দিষ্ট পরমাণবিক সংখ্যা: প্রতিটি মৌলিক পদার্থের পরমাণুতে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রোটন থাকে।
- নির্দিষ্ট রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য: প্রতিটি মৌলিক পদার্থের নিজস্ব রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য থাকে যা অন্যান্য মৌলিক পদার্থ থেকে আলাদা করে।
- সরলতম পদার্থ: মৌলিক পদার্থ আরও ভাঙা যায় না।
- মিশ্রণ তৈরির ক্ষমতা: মৌলিক পদার্থ পরস্পর মিশে যৌগ তৈরি করে।
- পরিবর্তন: মৌলিক পদার্থ রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে অন্য মৌলিক পদার্থে রূপান্তরিত হতে পারে।
প্রকৃতিতে 118 টি মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়।
কিছু সাধারণ মৌলিক পদার্থ:
- হাইড্রোজেন (H)
- অক্সিজেন (O)
- কার্বন (C)
- নাইট্রোজেন (N)
- ফসফরাস (P)
- সালফার (S)
- ক্লোরিন (Cl)
- সোডিয়াম (Na)
- পটাশিয়াম (K)
- ক্যালসিয়াম (Ca)
- আয়রন (Fe)
- অ্যালুমিনিয়াম (Al)
মৌলিক পদার্থের ব্যবহার:
- খাদ্য: আমরা যে খাবার খাই তাতে মৌলিক পদার্থ বিভিন্ন রূপে থাকে।
- ওষুধ: ওষুধ তৈরিতে মৌলিক পদার্থ ব্যবহৃত হয়।
- নির্মাণ: ইমারত তৈরিতে ইট, সিমেন্ট, ইস্পাত ইত্যাদি মৌলিক পদার্থ দিয়ে তৈরি।
- পোশাক: পোশাক তৈরিতে সুতি, রেশম, পলিয়েস্টার ইত্যাদি মৌলিক পদার্থ থেকে তৈরি তন্তু ব্যবহৃত হয়।
- বিদ্যুৎ: বিদ্যুৎ উৎপাদনে এবং বিতরণে মৌলিক পদার্থ ব্যবহৃত হয়।
যৌগিক পদার্থ কাকে বলে? যৌগিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য
যৌগিক পদার্থ হলো দুই বা দু’য়ের অধিক মৌলিক পদার্থের নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশ্রণে তৈরি পদার্থ। এই মিশ্রণে মৌলিক পদার্থগুলো তাদের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে নতুন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যৌগ তৈরি করে।
উদাহরণ:
- পানি (H2O): দুটি হাইড্রোজেন (H) এবং একটি অক্সিজেন (O) মিলে তৈরি।
- লবণ (NaCl): একটি সোডিয়াম (Na) এবং একটি ক্লোরিন (Cl) মিলে তৈরি।
- কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2): একটি কার্বন (C) এবং দুটি অক্সিজেন (O) মিলে তৈরি।
যৌগিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য:
- নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশ্রণ: যৌগ তৈরির জন্য মৌলিক পদার্থগুলোকে নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশ্রিত করতে হয়।
- নতুন বৈশিষ্ট্য: যৌগের বৈশিষ্ট্য মৌলিক পদার্থগুলোর বৈশিষ্ট্য থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হতে পারে।
- স্থায়ী: যৌগ সাধারণ পরিবেশে স্থায়ী থাকে।
- বিশ্লেষণযোগ্য: যৌগকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তার মৌলিক পদার্থগুলোতে বিশ্লেষণ করা যায়।
- একক আণবিক: যৌগের প্রতিটি একক কণা (আণু) মৌলিক পদার্থগুলোর নির্দিষ্ট অনুপাতে পরমাণু ধারণ করে।
যৌগিক পদার্থের গুরুত্ব:
- আমাদের জীবনে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
- খাদ্য, পানি, ঔষধ, জ্বালানি ইত্যাদি যৌগিক পদার্থ দিয়ে তৈরি।
- বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
- নতুন নতুন পদার্থ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পদার্থ বিজ্ঞান কাকে বলে? পদার্থ বিজ্ঞানের সংঙ্গা
পদার্থ বিজ্ঞান হলো প্রকৃতির মৌলিক নীতি এবং নিয়মাবলী সম্পর্কে জ্ঞানের শাখা যা স্থান, সময়, পদার্থ এবং শক্তি নিয়ে আলোচনা করে। এটি প্রকৃতির মৌলিক घटনা এবং বৈশিষ্ট্য বোঝার জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে।
পদার্থ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা:
- গতিবিদ্যা: স্থান, সময় এবং বলের সাথে সম্পর্কিত পদার্থের গতি নিয়ে আলোচনা করে।
- গুরুত্বাকর্ষণ: পৃথিবীর আকর্ষণ শক্তি এবং অন্যান্য গ্রহের মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ নিয়ে আলোচনা করে।
- তাপ বিজ্ঞান: তাপের প্রকৃতি, তাপের প্রবাহ এবং তাপের কাজ নিয়ে আলোচনা করে।
- ধ্বনিবিজ্ঞান: শব্দের প্রকৃতি, শব্দের তরঙ্গ এবং শব্দের প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করে।
- বিদ্যুৎ বিজ্ঞান: বিদ্যুৎ আধান, বিদ্যুৎ ক্ষেত্র এবং বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ে আলোচনা করে।
- চৌম্বক বিজ্ঞান: চৌম্বক ক্ষেত্র, চৌম্বক পদার্থ এবং চৌম্বক প্রবাহ নিয়ে আলোচনা করে।
- আলোকবিজ্ঞান: আলোর প্রকৃতি, আলোর তরঙ্গ এবং আলোর প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করে।
- পরমাণু বিজ্ঞান: পরমাণুর গঠন, পরমাণুর বৈশিষ্ট্য এবং পরমাণুর বিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে।
- কণা পদার্থ বিজ্ঞান: মৌলিক কণার প্রকৃতি, মৌলিক কণার মিথস্ক্রিয়া এবং মৌলিক কণার আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।
পদার্থ বিজ্ঞানের গুরুত্ব:
- আমাদের চারপাশের জগত বোঝার জন্য: পদার্থ বিজ্ঞান আমাদেরকে প্রকৃতির মৌলিক নীতি এবং নিয়মাবলী বুঝতে সাহায্য করে।
- নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য: পদার্থ বিজ্ঞানের নীতিগুলো নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
- সমস্যা সমাধানের জন্য: পদার্থ বিজ্ঞানের নীতিগুলো বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহার করা হয়।
- আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য: পদার্থ বিজ্ঞানের নীতিগুলো আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে ব্যবহার করা হয়।
আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের জনক কে?
আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের জনক হিসেবে একক ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করা কঠিন, কারণ এটি বিভিন্ন বিজ্ঞানীর অবদানের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে। তবে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানী যাদের অবদান আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপনে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে তারা হলেন:
- আইজ্যাক নিউটন: শাস্ত্রীয় বলবিদ্যা এবং গুরুত্বাকর্ষণের সূত্র আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত।
- আলবার্ট আইনস্টাইন: আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রস্তাব করার জন্য বিখ্যাত, যা স্থান, সময় এবং গুরুত্বাকর্ষণ সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আমূল পরিবর্তন করে।
- ম্যাক্স প্লাঙ্ক: কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রস্তাব করার জন্য বিখ্যাত, যা আলো এবং পদার্থের আচরণ ব্যাখ্যা করে।
- নীলস বোর: পরমাণুর গঠন সম্পর্কে আধুনিক ধারণা প্রস্তাব করার জন্য বিখ্যাত।
- ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ: অনিশ্চয়তার নীতি প্রস্তাব করার জন্য বিখ্যাত, যা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একটি মৌলিক নীতি।
- ম্যারি কিউরি: তেজষ্ক্রিয়তা আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত, যা পরমাণু বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।
এই বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি, আরও অনেক বিজ্ঞানী আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারণা:
- আপেক্ষিকতা তত্ত্ব: স্থান, সময় এবং গুরুত্বাকর্ষণ সম্পর্কে আমাদের ধারণা আমূল পরিবর্তন করে।
- কোয়ান্টাম তত্ত্ব: আলো এবং পদার্থের আচরণ ব্যাখ্যা করে।
- পরমাণু বিজ্ঞান: পরমাণুর গঠন এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞান।
- কণা পদার্থ বিজ্ঞান: মৌলিক কণার প্রকৃতি, মিথস্ক্রিয়া এবং আচরণ সম্পর্কে জ্ঞান।
আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাব:
- নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দিকে পরিচালিত করেছে: যেমন লেজার, ট্রানজিস্টর, নিউক্লিয়ার শক্তি, চিকিৎসা ইমেজিং ইত্যাদি।
- আমাদের চারপাশের জগত সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে পরিবর্তন করেছে: যেমন স্থান, সময়, বাস্তবতা ইত্যাদি সম্পর্কে আমাদের ধারণা।
- নতুন প্রশ্ন এবং রহস্য উন্মোচিত করেছে: যা বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণা করতে অনুপ্রাণিত করেছে।
সকল প্রকার পদার্থের সংঙ্গা
বিশুদ্ধ পদার্থ কাকে বলে?
বিশুদ্ধ পদার্থ: একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক গঠন সম্পন্ন পদার্থ যা অন্য কোন পদার্থের সাথে মিশ্রিত নয়।
বিশুদ্ধ পদার্থের বৈশিষ্ট্য:
- নির্দিষ্ট রাসায়নিক গঠন: নির্দিষ্ট অনুপাতে নির্দিষ্ট মৌলিক পদার্থ দ্বারা গঠিত।
- স্থির গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক: নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গলে এবং স্ফুট হয়।
- একক ধরনের কণা: পরমাণু, অণু, আয়ন ইত্যাদি।
- নির্দিষ্ট ঘনত্ব: নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট পরিমাণে নির্দিষ্ট ভর ধারণ করে।
- নির্দিষ্ট রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য: নির্দিষ্টভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।
- সমান বৈশিষ্ট্য: সমস্ত নমুনায় একই বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।
উদাহরণ:
- পানি (H2O): দুটি হাইড্রোজেন (H) এবং একটি অক্সিজেন (O) নির্দিষ্ট অনুপাতে (2:1) মিশে তৈরি।
- সোনা (Au): শুধুমাত্র সোনার (Au) পরমাণু দ্বারা গঠিত।
- লবণ (NaCl): একটি সোডিয়াম (Na) এবং একটি ক্লোরিন (Cl) নির্দিষ্ট অনুপাতে (1:1) মিশে তৈরি।
বিশুদ্ধ পদার্থ তৈরির পদ্ধতি:
- পৃথকীকরণ: মিশ্রণ থেকে বিভিন্ন উপাদান আলাদা করা।
- রাসায়নিক বিক্রিয়া: একটি পদার্থকে অন্য পদার্থে রূপান্তর করা।
- পুনঃস্ফটিকীকরণ: দ্রাবণ থেকে একটি পদার্থকে স্ফটিক আকারে পুনরুদ্ধার করা।
- বাহ্যিক পদার্থ অপসারণ: বিশুদ্ধ পদার্থ থেকে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের অপদার্থ অপসারণ করা।
বিশুদ্ধ পদার্থের গুরুত্ব:
- বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত হয়: বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যবহার করা হয়।
- ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়: বিভিন্ন ঔষধ তৈরিতে বিশুদ্ধ পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
- শিল্পে ব্যবহৃত হয়: বিভিন্ন ধরণের শিল্পে বিশুদ্ধ পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
- দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয়: বিভিন্ন খাদ্য, পানীয় এবং অন্যান্য দ্রব্য তৈরিতে বিশুদ্ধ পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
অবিশুদ্ধ পদার্থ কাকে বলে?
অবিশুদ্ধ পদার্থ: একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক গঠন সম্পন্ন পদার্থ যা অন্য কোন পদার্থের সাথে মিশ্রিত থাকে।
অবিশুদ্ধ পদার্থের বৈশিষ্ট্য:
- অনির্দিষ্ট রাসায়নিক গঠন: নির্দিষ্ট অনুপাতে নির্দিষ্ট মৌলিক পদার্থ দ্বারা গঠিত নয়।
- অস্থির গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক: নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গলে এবং স্ফুট হয় না।
- বিভিন্ন ধরনের কণা: পরমাণু, অণু, আয়ন, অপদার্থ ইত্যাদি।
- অনির্দিষ্ট ঘনত্ব: নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট পরিমাণে নির্দিষ্ট ভর ধারণ করে না।
- অনির্দিষ্ট রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য: নির্দিষ্টভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না।
- নমুনাভেদে বৈশিষ্ট্য ভিন্ন: সমস্ত নমুনায় একই বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে না।
উদাহরণ:
- নদীর জল: পানি (H2O), লবণ (NaCl), বালি, কাদা ইত্যাদি মিশ্রিত।
- বায়ু: অক্সিজেন (O2), নাইট্রোজেন (N2), কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), জলীয় বাষ্প (H2O) ইত্যাদি মিশ্রিত।
- গ্রানাইট: কোয়ার্টজ (SiO2), ফেল্ডস্পার (NaAlSi3O8, KAlSi3O8), মাইকা (KAl2(Si3AlO10)(OH)2) ইত্যাদি মিশ্রিত।
অবিশুদ্ধ পদার্থ তৈরির পদ্ধতি:
- প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ: প্রকৃতিতে প্রাপ্ত বিভিন্ন পদার্থ যা সাধারণত অবিশুদ্ধ থাকে।
- মানুষের তৈরি: বিভিন্ন শিল্প প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি পদার্থ যা অবিশুদ্ধ থাকে।
- মিশ্রণ: দুটি বা দু’য়ের অধিক পদার্থ মিশিয়ে তৈরি করা।
অবিশুদ্ধ পদার্থের গুরুত্ব:
- প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস: বিভিন্ন খনিজ পদার্থ, জীবাশ্ম জ্বালানি ইত্যাদি অবিশুদ্ধ পদার্থ।
- খাদ্যের উৎস: বিভিন্ন খাদ্যশস্য, ফল, শাকসবজি ইত্যাদি অবিশুদ্ধ পদার্থ।
- শিল্পে ব্যবহৃত হয়: বিভিন্ন ধরণের শিল্পে অবিশুদ্ধ পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
- দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয়: বিভিন্ন ধরণের জিনিসপত্র তৈরিতে অবিশুদ্ধ পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
বিশুদ্ধ এবং অবিশুদ্ধ পদার্থের মধ্যে পার্থক্য:
বৈশিষ্ট্য | বিশুদ্ধ পদার্থ | অবিশুদ্ধ পদার্থ |
---|---|---|
রাসায়নিক গঠন | নির্দিষ্ট | অনির্দিষ্ট |
গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক | স্থির | অস্থির |
কণার ধরন | একক | বিভিন্ন |
খনিজ পদার্থ কাকে বলে?
সংজ্ঞা: প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবীর ভূত্বকে গঠন করে এমন জৈবিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় না এমন স্থায়ী, অজৈব, কঠিন রাসায়নিক যৌগ।উদাহরণ: কোয়ার্টজ, ফেল্ডস্পার, ক্যালসাইট, মাইকা, তামা খনিজ, লোহা খনিজ ইত্যাদি।বৈশিষ্ট্য:
- নির্দিষ্ট রাসায়নিক গঠন
- স্থির বৈশিষ্ট্য
- নির্দিষ্ট স্ফটিক গঠন
- নির্দিষ্ট ঘনত্ব
- নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক
অর্ধ পরিবাহী পদার্থ কাকে বলে?
সংজ্ঞা: বিদ্যুৎ পরিবাহিতায় ধাতু এবং নিরোধকের মধ্যবর্তী বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।উদাহরণ: সিলিকন, জার্মেনিয়াম, গ্যালিয়াম আর্সেনাইড, ইনডিয়াম ফসফাইড ইত্যাদি।বৈশিষ্ট্য:
- নিম্ন তাপমাত্রায় নিরোধক, উচ্চ তাপমাত্রায় পরিবাহী
- ডোপিং করে পরিবাহিতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়
- ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হয়
পরিবাহী পদার্থ কাকে বলে?
সংজ্ঞা: বিদ্যুৎ প্রবাহের সহজ মাধ্যম।উদাহরণ: তামা, অ্যালুমিনিয়াম, সোনা, রূপা, ইস্পাত ইত্যাদি।বৈশিষ্ট্য:
- স্বাধীন ইলেকট্রন থাকে যা বিদ্যুৎ প্রবাহ বহন করে
- ভাল বিদ্যুৎ পরিবাহিতা
- তাপ পরিবাহিতায়ও ভাল
- বিদ্যুৎ তার, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হয়
অচৌম্বক পদার্থ কাকে বলে?
- সংজ্ঞা: চৌম্বক ক্ষেত্রে আকৃষ্ট হয় না।
- উদাহরণ: কাঠ, অ্যালুমিনিয়াম, তামা, সোনা, রূপা, প্লাস্টিক ইত্যাদি।
- বৈশিষ্ট্য:
- চৌম্বক ক্ষেত্রে আকৃষ্ট হয় না
- চৌম্বক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে না
- চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে না
উদাহরণ সারণি:
পদার্থ | ধরণ | উদাহরণ |
---|---|---|
খনিজ পদার্থ | প্রাকৃতিক | কোয়ার্টজ, ফেল্ডস্পার, ক্যালসাইট, মাইকা, তামা খনিজ, লোহা খনিজ |
অর্ধপরিবাহী | তৈরি | সিলিকন, জার্মেনিয়াম, গ্যালিয়াম আর্সেনাইড, ইনডিয়াম ফসফাইড |
পরিবাহী | ধাতু | তামা, অ্যালুমিনিয়াম, সোনা, রূপা, ইস্পাত |
অচৌম্বক | বিভিন্ন | কাঠ, অ্যালুমিনিয়াম, তামা, সোনা, রূপা, প্লাস্টিক |
চৌম্বক পদার্থ কাকে বলে?
সংজ্ঞা: চৌম্বক ক্ষেত্রে আকৃষ্ট হয় এমন পদার্থ।উদাহরণ: লোহা, নিকেল, কোবাল্ট, চৌম্বক খনিজ (ম্যাগনেটাইট, হেমাটাইট), চৌম্বক ধাতু (Neodymium, Samarium) ইত্যাদি।বৈশিষ্ট্য:
- চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে
- চৌম্বক ক্ষেত্রে আকৃষ্ট হয়
- চৌম্বক শক্তি ধারণ করে
সেকেন্ডারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ কাকে বলে?
সংজ্ঞা: প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের সাথে প্রতিক্রিয়া করে নির্ধারিত নির্ভুলতার সাথে ঘনত্ব বা শক্তি নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত পদার্থ।উদাহরণ: অক্সালিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম ডিক্রোমেট, সোডিয়াম থায়োসালফেট ইত্যাদি।বৈশিষ্ট্য:
- উচ্চ বিশুদ্ধতা
- স্থিতিশীল রাসায়নিক গঠন
- সহজে ওজন করা যায়
- নির্ভুলভাবে বিশ্লেষণ করা যায়
প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ কাকে বলে?
সংজ্ঞা: নির্দিষ্ট ওজন এবং নির্ভুলভাবে নির্ধারিত ঘনত্ব বা শক্তি সম্পন্ন রাসায়নিক যৌগ।উদাহরণ: সোডিয়াম কার্বোনেট, পটাশিয়াম ব্রোমাইড, বেনজোইক অ্যাসিড ইত্যাদি।বৈশিষ্ট্য:
- সর্বোচ্চ বিশুদ্ধতা
- স্থিতিশীল রাসায়নিক গঠন
- সহজে ওজন করা যায়
- নির্ভুলভাবে বিশ্লেষণ করা যায়
জারক পদার্থ কাকে বলে?
- সংজ্ঞা: রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন গ্রহণ করে এমন পদার্থ।
- উদাহরণ: অক্সিজেন, নাইট্রিক অ্যাসিড, ক্লোরিন, পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ইত্যাদি।
- বৈশিষ্ট্য:
- ইলেকট্রন গ্রহণকারী
- অক্সিডেশন সংখ্যা বৃদ্ধি করে
- জারণ বিক্রিয়া ঘটায়
উদাহরণ সারণি:
ধরণ | সংজ্ঞা | উদাহরণ |
---|---|---|
চৌম্বক পদার্থ | চৌম্বক ক্ষেত্রে আকৃষ্ট হয় | লোহা, নিকেল, কোবাল্ট, চৌম্বক খনিজ |
সেকেন্ডারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ | প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ডের সাথে প্রতিক্রিয়া করে ঘনত্ব বা শক্তি নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত | অক্সালিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম ডিক্রোমেট |
প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ | নির্দিষ্ট ওজন এবং নির্ভুল ঘনত্ব বা শক্তি সম্পন্ন রাসায়নিক যৌগ | সোডিয়াম কার্বোনেট, পটাশিয়াম ব্রোমাইড |
দাহ্য পদার্থ কাকে বলে?
সংজ্ঞা: বাতাসের উপস্থিতিতে দ্রুত জ্বলন্ত পদার্থ।উদাহরণ: কাঠ, কাগজ, তেল, গ্যাস, পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদি।বৈশিষ্ট্য:
- দাহ্য গ্যাস বা তরল উৎপন্ন করে
- তাপ এবং আলো নির্গত করে
- জ্বলনশীল বিক্রিয়া ঘটায়
তেজস্ক্রিয় পদার্থ কাকে বলে?
সংজ্ঞা: নিউক্লিয়াস থেকে কণা (যেমন আলফা, বিটা, গামা) নির্গত করে এমন পদার্থ।উদাহরণ: ইউরেনিয়াম, রেডিয়াম, প্লুটোনিয়াম, থোরিয়াম ইত্যাদি।বৈশিষ্ট্য:
- তেজষ্ক্রিয়তা প্রদর্শন করে
- তেজষ্ক্রিয়তা ক্ষয় প্রক্রিয়া ঘটায়
- তেজষ্ক্রিয়তা বিপজ্জনক হতে পারে
অজৈব পদার্থ কাকে বলে?
সংজ্ঞা: জীবন্ত কোষ দ্বারা উৎপন্ন হয় না এমন পদার্থ।উদাহরণ: পাথর, ধাতু, পানি, লবণ, খনিজ, কাচ ইত্যাদি।বৈশিষ্ট্য:
- জীবন্ত কোষের অংশ নয়
- জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না
- প্রাকৃতিকভাবে বা কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যায়
জৈব পদার্থ কাকে বলে?
সংজ্ঞা: জীবন্ত কোষ দ্বারা উৎপন্ন হয় এমন পদার্থ। উদাহরণ: প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, নিউক্লিক অ্যাসিড, ভিটামিন, খনিজ ইত্যাদি।বৈশিষ্ট্য:
- জীবন্ত কোষের অংশ
- জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে
- জীবের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য
উদ্বায়ী পদার্থ কাকে বলে?
- সংজ্ঞা: সহজেই তরল থেকে বাষ্পে রূপান্তরিত হয় এমন পদার্থ।
- উদাহরণ: অ্যালকোহল, পানি, অ্যাসিটোন, পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদি।
- বৈশিষ্ট্য:
- কম ফুটন্ত বিন্দু
- তরল থেকে বাষ্পে সহজে রূপান্তরিত হয়
- বাষ্প বায়ুতে মিশে যায়
উদাহরণ সারণি:
ধরণ | সংজ্ঞা | উদাহরণ |
---|---|---|
দাহ্য পদার্থ | বাতাসের উপস্থিতিতে দ্রুত জ্বলন্ত পদার্থ | কাঠ, কাগজ, তেল |
তেজস্ক্রিয় পদার্থ | নিউক্লিয়াস থেকে কণা নির্গত করে এমন পদার্থ | ইউরেনিয়াম, রেডিয়াম |
অজৈব পদার্থ | জীবন্ত কোষ দ্বারা উৎপন্ন হয় না এমন পদার্থ | পাথর, ধাতু, পানি |
জৈব পদার্থ | জীবন্ত কোষ দ্বারা উৎ |