SC > গণিত > কোণ কাকে বলে? কোণ কত প্রকার ও কি কি?

কোণ কাকে বলে? কোণ কত প্রকার ও কি কি?

জ্যামিতি বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা যা বিন্দু, রেখা, তল, কোণ এবং আকৃতির ধারণা নিয়ে কাজ করে। এই ধারণাগুলোর মধ্যে কোণ একটি মৌলিক ধারণা যা বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি এবং গাণিতিক সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়।

আজ আমরা কোণ কাকে বলে? কোণ কত প্রকার ও কি কি ছাড়াও কোণ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।

কোণ কাকে বলে?
কোণ কাকে বলে?

কোণ কাকে বলে?

জ্যামিতিতে, দুটি রেখাংশের মিলনস্থলকে কোণ বলে। এই দুটি রেখাংশকে রশ্মিও বলা হয়। রশ্মি দুটি একটি শীর্ষবিন্দুতে মিলিত হয়। এবং যে দুটি রশ্মি বা রেখাংশ দ্বারা কোণ তৈরি হয়, সেই রেখাংশ দুটি অবশ্যই একই সমতলে অবস্থান করবে।

কোণের বৈশিষ্ট্য:

  • একই সমতলে অবস্থিত: যে দুটি রেখাংশ দ্বারা কোণ তৈরি হয়, সেই রেখাংশ দুটি অবশ্যই একই সমতলে অবস্থিত থাকতে হবে।
  • শীর্ষবিন্দু: কোণের শীর্ষবিন্দু হলো যেখানে দুটি রেখাংশ একে অপরের সাথে মিলিত হয়।
  • কোণের পরিমাণ: কোণের পরিমাণ হলো শীর্ষবিন্দু থেকে রেখাংশ দুটির মধ্যে যে কোণ তৈরি হয়। কোণের পরিমাণ ডিগ্রি বা রেডিয়ান এককে পরিমাপ করা হয়।

উদাহরণ:

  • একটি টেবিলের দুটি পা একে অপরের সাথে যে কোণ তৈরি করে তা একটি কোণ।
  • একটি ঘড়ির কাঁটার দুটি অবস্থানের মধ্যে যে কোণ তৈরি করে তা একটি কোণ।
  • একটি ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি 180 ডিগ্রি।

উপরে আমরা কোণ কাকে বলে তা জানলাম। এবার পরিমাণ এবং অবস্থানভেদে কোণের প্রকারভেদগুলো দেখব।

কোণের প্রকারভেদ

পরিমাণ ভেদে:

  • সমকোণ (90°)
  • সরল কোণ (180°)
  • সূক্ষ্মকোণ (90° এর কম)
  • স্থূলকোণ (90° এর বেশি কিন্তু 180° এর কম)
  • সমতল কোণ (180°)
  • প্রবৃদ্ধ কোণ (180° এর বেশি কিন্তু 360° এর কম)
  • পূর্ণকোণ (360°)

অবস্থান ভেদে:

  • বিপ্রতীপ কোণ
  • একান্তর কোণ
  • অনুরূপ কোণ
  • সন্নিহিত কোণ
  • অস্বঃস্থ কোণ
  • বহিঃস্থ কোণ
  • শিরকোণ
  • উন্নতিকোণ
  • অবনতিকোণ
  • কেন্দ্রস্থকোণ
  • বৃত্তস্থকোণ
  • অধবৃত্তকোণ

পরিমাণ ভেদে বিভক্ত কোণগুলোর সঙ্গাসহ ব্যাখ্যাঃ

সমকোণ

সমকোণ (90°): জ্যামিতিতে কোণ হলো দুইটি সরলরেখা যে একটি সাধারণ বিন্দুতে মিলিত হয় সেই স্থান। সমকোণ হলো এমন একটি বিশেষ প্রকারের কোণ, যার মান ৯০ ডিগ্রি। অর্থাৎ, দুইটি সরলরেখা যখন একে অপরকে লম্বভাবে ছেদ করে, তখন তাকে সমকোণ বলে।

সরল কোণ

সরল কোণ (180°):দুটি রেখাংশ যখন একে অপরের সাথে লম্বভাবে মিলিত হয় তখন যে কোণ তৈরি হয় তাকে সরল কোণ বলে। সরল কোণের পরিমাণ 180°।

অর্থাৎ আমরা বলতে পারি  ২ সমকোণ = ১ সরলকোণ।

সূক্ষ্মকোণ

সূক্ষ্মকোণ (90° এর কম):সরল কোণের (90°) চেয়ে ছোট কোণকে সূক্ষ্মকোণ বলে। সূক্ষ্মকোণের পরিমাণ 0° থেকে 89° এর মধ্যে হতে পারে।

স্থূলকোণ

স্থূলকোণ (90° এর বেশি কিন্তু 180° এর কম):সরল কোণের (90°) চেয়ে বড় কিন্তু সমতল কোণের (180°) চেয়ে ছোট কোণকে স্থূলকোণ বলে। স্থূলকোণের পরিমাণ 91° থেকে 179° এর মধ্যে হতে পারে।

সমতল কোণ

সমতল কোণ (180°):দুটি রেখাংশ যখন একে অপরের সাথে সমান্তরালভাবে মিলিত হয় তখন যে কোণ তৈরি হয় তাকে সমতল কোণ বলে। সমতল কোণের পরিমাণ 180°।

প্রবৃদ্ধ কোণ

প্রবৃদ্ধ কোণ (180° এর বেশি কিন্তু 360° এর কম): সমতল কোণের (180°) চেয়ে বড় কিন্তু পূর্ণকোণের (360°) চেয়ে ছোট কোণকে প্রবৃদ্ধ কোণ বলে। প্রবৃদ্ধ কোণের পরিমাণ 181° থেকে 359° এর মধ্যে হতে পারে।

পূর্ণকোণ

পূর্ণকোণ (360°): একটি রেখাংশ যখন নিজের উপর সম্পূর্ণভাবে অপেক্ষাকৃত হয় তখন যে কোণ তৈরি হয় তাকে পূর্ণকোণ বলে। পূর্ণকোণের পরিমাণ 360°।

অবস্থান ভেদে বিভক্ত কোণগুলোর সঙ্গাসহ ব্যাখ্যাঃ

বিপ্রতীপ কোণ

বিপ্রতীপ কোণ: একটি রেখাংশ দ্বারা বিভক্ত দুটি স্থূলকোণকে বিপ্রতীপ কোণ বলে। বিপ্রতীপ কোণের পরিমাণ পরস্পর সমান হয়।

একান্তর কোণ

একান্তর কোণ: একটি রেখাংশ দ্বারা বিভক্ত দুটি সূক্ষ্ম কোণকে একান্তর কোণ বলে। একান্তর কোণের পরিমাণ পরস্পর সমান হয়।

অনুরূপ কোণ

অনুরূপ কোণ: দুটি রেখাংশ যখন সমান্তরাল হয় এবং একটি অন্য রেখাংশ দ্বারা বিভক্ত হয় তখন সেই রেখাংশ দ্বারা বিভক্ত কোণ দুটিকে অনুরূপ কোণ বলে। অনুরূপ কোণের পরিমাণ পরস্পর সমান হয়।

সন্নিহিত কোণ

সন্নিহিত কোণ: একটি শীর্ষবিন্দুতে মিলিত দুটি কোণকে সন্নিহিত কোণ বলে। সন্নিহিত কোণের পরিমাণের যোগফল 180° হয়।

অস্বঃস্থ কোণ

অস্বঃস্থ কোণ: একটি শীর্ষবিন্দুতে মিলিত তিনটি কোণের মধ্যে যে কোণ বড় হয় তাকে অস্বঃস্থ কোণ বলে।

বহিঃস্থ কোণ

বহিঃস্থ কোণ: একটি রেখাংশ একটি কোণের দুটি রশ্মিকে ভেদ করে ঐ কোণের বাইরে অবস্থিত কোণকে বহিঃস্থ কোণ বলে। বহিঃস্থ কোণের পরিমাণ তার বিপরীত কোণের (অর্থাৎ, কোণের ভিতরে অবস্থিত কোণ) দুইটি সন্নিহিত কোণের পরিমাণের সমান হয়।

শিরকোণ

শিরকোণ: একটি সরল কোণের (90°) উপরে অবস্থিত যেকোনো কোণকে শিরকোণ বলে। শিরকোণের পরিমাণ 90° থেকে 180° এর মধ্যে হতে পারে।

উন্নতিকোণ

উন্নতিকোণ: একটি সরল কোণের (90°) নিচে অবস্থিত যেকোনো কোণকে উন্নতিকোণ বলে। উন্নতিকোণের পরিমাণ 0° থেকে 90° এর মধ্যে হতে পারে।

কেন্দ্রস্থ কোণ

কেন্দ্রস্থ কোণ: একটি বৃত্তের কেন্দ্র এবং বৃত্তের পরিধির দুটি বিন্দুকে সংযোগকারী রেখাংশ দ্বারা গঠিত কোণকে কেন্দ্রস্থ কোণ বলে। কেন্দ্রস্থ কোণের পরিমাণ একটি বৃত্তের সেই করেব ধনুভাগের (circular arc) ব্যাসার্ধের অনুপাতের সমান, যাকে সেই কেন্দ্রস্থ কোণ দ্বারা নির্দেশ করা হয়।

বৃত্তস্থ কোণ

বৃত্তস্থ কোণ: একটি বৃত্তের যেকোনো দুটি চাপ (arc) দ্বারা গঠিত কোণকে বৃত্তস্থ কোণ বলে। এই ক্ষেত্রে, চাপ দুটির দুই প্রান্তবিন্দু এবং বৃত্তের কেন্দ্র – এই তিনটি বিন্দু দ্বারা গঠিত কোণকে বৃত্তস্থ কোণ বলা হয়।

অধবৃত্তস্থ কোণ

অধবৃত্তস্থ কোণ: একটি অধিবৃত্তের যেকোনো দুটি চাপ (arc) দ্বারা গঠিত কোণকে অধিবৃত্তস্থ কোণ বলে। এই ক্ষেত্রে, চাপ দুটির দুই প্রান্তবিন্দু এবং অধিবৃত্তের কেন্দ্র – এই তিনটি বিন্দু দ্বারা গঠিত কোণকে অধিবৃত্তস্থ কোণ বলা হয়। বৃত্তস্থ কোণের মতই, অধিবৃত্তের জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে, অধিবৃত্তস্থ কোণের বিশেষ কিছু ব্যাখ্যা আছে।

আরও পড়ুনঃ চতুর্ভুজ কাকে বলে? চতুর্ভুজ কত প্রকার ও কি কি?

কোণের ইতিহাস এবং উৎপত্তি

আমরা যে “কোণ” শব্দটি ব্যবহার করি তার উৎপত্তি লাতিন ভাষার “angulus” শব্দ থেকে। “Angulus” শব্দের অর্থ “ধার” বা “কোণ”।

ধারণা করা হয়, কোণের ধারণাটি প্রথমে জ্যামিতি ও স্থাপত্যশিল্পে ব্যবহৃত হত। ভবন নির্মাণের সময়, ইট ও পাথরের টুকরোগুলোকে নির্দিষ্ট কোণে সাজিয়ে দেওয়া হত যাতে নির্মাণকাজ সুন্দর ও দৃঢ় হয়।

ক্রমশ, “angulus” শব্দটি জ্যামিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণায় পরিণত হয়। জ্যামিতিতে, কোণকে দুটি রেখাংশের মিলনস্থল হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। কোণের পরিমাণ ডিগ্রী বা রেডিয়ান এককে পরিমাপ করা হয়।

কোণের ধারণা প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের জ্ঞানের অংশ। জ্যোতির্বিদ্যা, স্থাপত্য, এবং প্রকৌশলের ক্ষেত্রে কোণের ব্যবহার দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। প্রাচীন মিশরীয়রা পিরামিড নির্মাণের সময় কোণের ব্যবহার করেছিল, এবং গ্রীক জ্যোতির্বিদরা গ্রহের গতিপথ নির্ধারণের জন্য কোণ ব্যবহার করেছিল।

কোণের ধারণাটি প্রথম সংজ্ঞায়িত করেছিলেন ইউক্লিড তার “এলিমেন্টস” বইয়ে। তিনি একটি কোণকে একটি বিন্দু থেকে উৎপন্ন দুটি রশ্মি (রে-রেখা) দ্বারা তৈরি আকৃতি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন।

কোণের প্রকাশ

কোণ পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন ইউনিট ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে সাধারণ দুটি ইউনিট হল ডিগ্রি এবং রেডিয়ান। একটি ডিগ্রি (°) হল একটি বৃত্তের 360 ভাগের একটি ভাগ। একটি রেডিয়ান (rad) হল একটি বৃত্তের পরিধির একটি দৈর্ঘ্য যা বৃত্তের ব্যাসের সমান।

প্রোট্র্যাক্টর
প্রোট্র্যাক্টর

কোণ পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে সাধারণ যন্ত্র হল প্রোট্র্যাক্টর। প্রোট্র্যাক্টর হল একটি অর্ধবৃত্তাকার যন্ত্র যার উপরে ডিগ্রি স্কেল থাকে। কোণ পরিমাপ করার জন্য, প্রোট্র্যাক্টরের কেন্দ্রটি বিন্দুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয় এবং একটি রশ্মি প্রোট্র্যাক্টরের ভিত্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়। অন্য রশ্মিটি ডিগ্রি স্কেলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয় যা কোণের পরিমাণ নির্দেশ করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top