SC > অর্থনীতি > সমাজকর্ম এর জনক কে?

সমাজকর্ম এর জনক কে?

সমাজকর্ম এর জনক: জেন অ্যাডামসকে সমাজকর্ম এর জনক বলা হয়। আর অ্যানা এল. ডস-কে সমাজকর্ম শিক্ষার জনক বলা হয়।

সমাজকর্মের জনক: জেন অ্যাডামসের জীবনী ও অবদান

সমাজকর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যা সামাজিক সমস্যার সমাধান এবং সমাজের উন্নতির জন্য কাজ করে। এই ক্ষেত্রের জনক হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত জেন আদামস (Jane Addams) একটি অগ্রগণ্য নাম। তার কর্মজীবন এবং অবদানের মাধ্যমে তিনি সমাজকর্মের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং এই পেশার গুরুত্ব ও মূল্যবোধ প্রসারিত করেন। এই ব্লগে আমরা জেন আদামসের জীবনী, তার উল্লেখযোগ্য অবদান, এবং সমাজকর্মের ইতিহাসে তার স্থান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আরও পড়ুন: হিসাববিজ্ঞানের জনক কে?

জেন অ্যাডামসের জীবনী

জেন আদামসের জন্ম ৬ সেপ্টেম্বর, ১৮৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় রাজ্যের সিডারভিল শহরে। তার পিতা, জন এইচ. আদামস, একজন সমৃদ্ধ ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই জেন সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মানুষের সাহায্যের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। ১৮৮১ সালে তিনি রকফোর্ড মহিলা সেমিনারী থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

সমাজকর্মে জেন আদামসের প্রবেশ

জেন আদামসের জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে যখন তিনি ইউরোপ ভ্রমণ করেন এবং লন্ডনের টয়নবি হল পরিদর্শন করেন। এই অভিজ্ঞতা তাকে সমাজসেবামূলক কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত করে। ১৮৮৯ সালে, তিনি তার বন্ধু এলেন গেটস স্টারের সাথে মিলে শিকাগোতে হাল হাউস প্রতিষ্ঠা করেন। হাল হাউস একটি সমাজসেবা কেন্দ্র ছিল যা দরিদ্র জনগণের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং সামাজিক সহায়তা প্রদান করতো।

হাল হাউসের প্রতিষ্ঠা এবং এর প্রভাব

হাল হাউস ছিল এক প্রকারের সেটেলমেন্ট হাউস, যা দরিদ্র অভিবাসী এবং শ্রমিক শ্রেণীর মানুষদের সহায়তা করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখানে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম, শিক্ষা কর্মসূচি, এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। হাল হাউসের মাধ্যমে জেন আদামস এবং তার সহকর্মীরা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সমঝোতার ভিত্তি স্থাপন করেন।

জেন অ্যাডামসের উল্লেখযোগ্য অবদান

১. শ্রমিক আন্দোলন ও অধিকার: জেন আদামস শ্রমিকদের অধিকার ও শর্তাবলীর উন্নতির জন্য সংগ্রাম করেন। তিনি শিশু শ্রম, নারী শ্রম, এবং শ্রমিকদের কাজের পরিবেশের উন্নতির জন্য কাজ করেন।

২. শান্তি আন্দোলন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জেন আদামস শান্তি আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯১৫ সালে মহিলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্বাধীনতা লীগ (Women’s International League for Peace and Freedom) প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন।

৩. নারীর অধিকার ও সমানতা: জেন আদামস নারী অধিকারের জন্যও সংগ্রাম করেন। তিনি নারী ভোটাধিকার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং নারীদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য কাজ করেন।

জেন আদামসের পুরস্কার ও সম্মাননা

জেন আদামসের অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৩১ সালে, তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন, যা তাকে প্রথম আমেরিকান নারী হিসেবে এই সম্মান প্রদান করে। তার সমাজসেবা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সম্মানিত হন।

সমাজকর্মের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ

জেন আদামসের অবদান শুধু তার জীবদ্দশায় নয়, বরং বর্তমান সমাজেও বহুল প্রশংসিত। তার স্থাপিত নীতিমালা ও মূল্যবোধগুলি সমাজকর্মের মূল ভিত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। আজকের সমাজকর্মীরা তার প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে সমাজের দুর্বল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবায় কাজ করছেন।

শেষকথা

জেন আদামসের জীবনী এবং তার সমাজকর্মের অবদান থেকে আমরা শিখি কিভাবে একজন ব্যক্তি তার সদিচ্ছা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তার উদাহরণ আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে যে, আমরা সবাই আমাদের সমাজে একটি পরিবর্তন আনতে সক্ষম। সমাজকর্মের জনক হিসেবে জেন আদামসের নাম চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং তার আদর্শগুলি আমাদের কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top