SC > গণিত > সন্নিহিত কোণ কাকে বলে?(চিত্র সহ সংজ্ঞা দিন)

সন্নিহিত কোণ কাকে বলে?(চিত্র সহ সংজ্ঞা দিন)

আজকের আর্টিকেলে আমরা জ্যামিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক অর্থাৎ সন্নিহিত কোণ কাকে বলে? (চিত্র সহ সংজ্ঞা দিন) সম্পর্কে আলোচনা করব।

সন্নিহিত কোণ কাকে বলে?(চিত্র সহ সংজ্ঞা দিন)

একই সমতলে অবস্থিত দুটি কোণ যাদের একটি সাধারণ শীর্ষবিন্দু এবং একটি সাধারণ বাহু থাকে, কিন্তু একে অপরের সম্পূরক নয়, তাদের সন্নিহিত কোণ বলে।

অন্যভাবে বলা যায়:

  • যদি দুটি কোণের একটি সাধারণ শীর্ষবিন্দু থাকে এবং একটি সাধারণ বাহু দ্বারা বিভক্ত থাকে, কিন্তু এদের মধ্যে কোনো সাধারণ অংশ না থাকে, তবে সেই দুটি কোণকে সন্নিহিত কোণ বলে।
  • সহজ কথায়, যদি দুটি কোণ পাশাপাশি থাকে এবং একটি সাধারণ শীর্ষবিন্দু থাকে, তবে সেই দুটি কোণকে সন্নিহিত কোণ বলে।

উদাহরণ:

সন্নিহিত কোণ কাকে বলে

উপরের চিত্রে, ∠BAC এবং ∠CAD হলো দুটি সন্নিহিত কোণ। কারণ,

  • এদের একটি সাধারণ শীর্ষবিন্দু A আছে।
  • এদের একটি সাধারণ বাহু AC আছে।
  • এদের মধ্যে কোনো সাধারণ অংশ নেই।

সন্নিহিত কোণের বৈশিষ্ট্য

1. যোগফল:

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, দুটি সন্নিহিত কোণের যোগফল সর্বদা 180°

গাণিতিকভাবে, যদি A হলো সন্নিহিত কোণ ∠BAC এবং ∠CAD এর শীর্ষবিন্দু, এবং AC তাদের সাধারণ বাহু হয়, তাহলে:

∠BAC + ∠CAD = 180°

2. সমকোণের সাথে সম্পর্ক:

  • যদি একটি সন্নিহিত কোণ সমকোণ (90°) হয়, তবে তার অপর সন্নিহিত কোণটি সূক্ষ্মকোণ (0° < ∠ < 90°) হবে।
  • সহজ কথায়, একটি সমকোণের সন্নিহিত কোণ সর্বদা একটি সূক্ষ্মকোণ হবে।

3. ত্রিভুজে ব্যবহার:

  • যেকোনো ত্রিভুজের দুটি অভ্যন্তরীণ কোণের যোগফল 180°।
  • এই নীতিটি ব্যবহার করে, আমরা ত্রিভুজের তৃতীয় কোণের মান নির্ণয় করতে পারি যদি আমরা অন্য দুটি কোণের মান জানি।
  • উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি ত্রিভুজের দুটি কোণ 60° এবং 70° হয়, তবে তৃতীয় কোণটি 180° – (60° + 70°) = 50° হবে।

4. অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:

  • সন্নিহিত কোণের পরিপূরক কোণ একে অপরের বিপরীত দিকে অবস্থিত।
  • সন্নিহিত কোণের লম্ব কোণ একে অপরের সমকোণ।

উল্লেখ্য:

  • সন্নিহিত কোণ শুধুমাত্র সমতলেই বিদ্যমান।
  • ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিতে, সন্নিহিত কোণের ধারণা একইভাবে প্রযোজ্য নয়।

সন্নিহিত কোণের ব্যবহার

সন্নিহিত কোণ জ্যামিতি, ত্রিভুজমিতি এবং অন্যান্য গাণিতিক শাখায় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যবহার নিচে তালিকাভুক্ত করা হলো:

1. ত্রিভুজের কোণ নির্ণয়:

  • যেকোনো ত্রিভুজের দুটি অভ্যন্তরীণ কোণের যোগফল 180°।
  • এই নীতিটি ব্যবহার করে, আমরা ত্রিভুজের তৃতীয় কোণের মান নির্ণয় করতে পারি যদি আমরা অন্য দুটি কোণের মান জানি।
  • উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি ত্রিভুজের দুটি কোণ 60° এবং 70° হয়, তবে তৃতীয় কোণটি 180° – (60° + 70°) = 50° হবে।

2. সমান্তরাল রেখা নির্ণয়:

  • যদি দুটি রেখা একে অপরের সাথে ছেদ করে এবং উৎপন্ন কোণগুলির একটি জোড়া সন্নিহিত কোণ হয় এবং সমান হয়, তবে সেই দুটি রেখা সমান্তরাল
  • এই নীতিটি ব্যবহার করে, আমরা সমান্তরাল রেখাগুলি চিহ্নিত করতে পারি।

3. দিকনির্দেশ নির্ধারণ:

  • মানচিত্র এবং কম্পাস ব্যবহার করে দিকনির্দেশ নির্ধারণে সন্নিহিত কোণ ব্যবহার করা হয়।
  • উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি উত্তর দিকে মুখ করে থাকেন এবং আপনার ডানদিকে 45° কোণ ঘোরান, তাহলে আপনি উত্তর-পূর্ব দিকে মুখ করে থাকবেন।

4. ভবন, সেতু, এবং রাস্তা নির্মাণ:

  • ভবন, সেতু, এবং রাস্তা নির্মাণের সময় কোণগুলির সঠিক পরিমাপ নিশ্চিত করতে সন্নিহিত কোণ ব্যবহার করা হয়।
  • উদাহরণস্বরূপ, একটি ভবনের দেয়ালের দুটি কোণ যাতে সঠিকভাবে 90° হয় তা নিশ্চিত করতে সন্নিহিত কোণ ব্যবহার করা হয়।

5. জ্যোতির্বিদ্যা:

  • জ্যোতির্বিদ্যায়, গ্রহ, নক্ষত্র এবং অন্যান্য আকাশগোলের অবস্থান নির্ধারণে সন্নিহিত কোণ ব্যবহার করা হয়।

এছাড়াও, সন্নিহিত কোণ ব্যবহার করে আরও অনেক কিছু করা সম্ভব।

পূরক কোণ কাকে বলে? পূরক কোণ বলতে কী বুঝ?

পূরক কোণ হলো দুটি কোণ যাদের যোগফল ৯০ ডিগ্রি বা একটি সমকোণ হয়।

অন্য কথায়, যদি A এবং B দুটি কোণ হয় এবং A + B = ৯০°, তাহলে A এবং B কে পূরক কোণ বলা হয়।

উদাহরণ:

  • ৩০° এবং ৬০° পূরক কোণ কারণ ৩০° + ৬০° = ৯০°
  • ৪৫° এবং ৪৫° পূরক কোণ কারণ ৪৫° + ৪৫° = ৯০°
  • ৭০° এবং ২০° পূরক কোণ কারণ ৭০° + ২০° = ৯০°

পূরক কোণের বৈশিষ্ট্য:

  • প্রতিটি কোণ অন্য কোণের সম্পূরক হয়।
  • দুটি পূরক কোণ একই সমতলে অবস্থিত থাকে এবং একই শীর্ষবিন্দু ভাগ করে।
  • যদি একটি কোণ পূরক কোণের মান জানা থাকে, অন্য কোণের মান সহজেই পেয়ে যাওয়া যায়

সূত্র:

B = ৯০° – A, যেখানে A হলো একটি কোণ এবং B হলো অন্য কোণের মান

পূরক কোণের বৈশিষ্ট্য

পূরক কোণ হলো দুটি কোণ যাদের যোগফল ৯০ ডিগ্রি বা একটি সমকোণ হয়। পূরক কোণের বৈশিষ্ট্য গুলো হল:

১. সম্পূরকতা:

  • প্রতিটি কোণ অন্য কোণের সম্পূরক হয়।
  • অর্থাৎ, যদি A এবং B দুটি কোণ হয় এবং A + B = ৯০°, তাহলে A কে B এর সম্পূরক বলা হয় এবং B কে A এর সম্পূরক বলা হয়।

২. অবস্থান:

  • দুটি পূরক কোণ একই সমতলে অবস্থিত থাকে এবং একই শীর্ষবিন্দু ভাগ করে।
  • অর্থাৎ, যদি A এবং B দুটি কোণ হয় এবং A + B = ৯০°, তাহলে A এবং B একই সমতলে অবস্থিত থাকবে এবং O নামক একটি শীর্ষবিন্দু ভাগ করবে।

৩. মান নির্ণয়:

  • যদি একটি কোণ পূরক কোণের মান জানা থাকে, অন্য কোণের মান সহজেই পেয়ে যাওয়া যায়।
  • সূত্র: B = ৯০° – A, যেখানে A হলো একটি কোণ এবং B হলো অন্য কোণের মান

৪. ত্রিভুজে ব্যবহার:

  • ত্রিভুজের কোণ গণনা করতে পূরক কোণ ব্যবহার করা হয়।
  • যদি একটি ত্রিভুজের দুটি কোণ জানা থাকে, তাহলে তৃতীয় কোণের মান পূরক কোণের ধারণা ব্যবহার করে পেয়ে যাওয়া যায়।

৫. সমকোণী ত্রিভুজ চিহ্নিতকরণ:

  • সমকোণী ত্রিভুজ চিহ্নিত করতে পূরক কোণ ব্যবহার করা হয়।
  • যদি একটি ত্রিভুজের দুটি কোণ পূরক কোণ হয়, তাহলে সেই ত্রিভুজ একটি সমকোণী ত্রিভুজ।

৬. ভৌমিতিক সমস্যা সমাধান:

  • ভৌমিতিক সমস্যা সমাধানে পূরক কোণ ব্যবহার করা হয়।
  • অনেক ভৌমিতিক সমস্যা সমাধানে পূরক কোণের ধারণা প্রয়োজন হয়।

উদাহরণ:

  • ৩০° এবং ৬০° পূরক কোণ কারণ ৩০° + ৬০° = ৯০°
  • ৪৫° এবং ৪৫° পূরক কোণ কারণ ৪৫° + ৪৫° = ৯০°
  • ৭০° এবং ২০° পূরক কোণ কারণ ৭০° + ২০° = ৯০°

পূরক কোণ জ্যামিতি এবং ত্রিকোণমিতি সহ অনেক গাণিতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পূরক কোণের ব্যবহার

পূরক কোণ হলো দুটি কোণ যাদের যোগফল ৯০ ডিগ্রি বা একটি সমকোণ হয়। পূরক কোণের ব্যবহার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায়, যার মধ্যে রয়েছে:

১. ত্রিভুজের কোণ গণনা:

  • ত্রিভুজের কোণ গণনা করতে পূরক কোণ ব্যবহার করা হয়।
  • যদি একটি ত্রিভুজের দুটি কোণ জানা থাকে, তাহলে তৃতীয় কোণের মান পূরক কোণের ধারণা ব্যবহার করে পেয়ে যাওয়া যায়।

উদাহরণ:

একটি ত্রিভুজে, A কোণ 50° এবং B কোণ 30°C কোণের মান কত?

সমাধান:

C = 90° – (A + B)C = 90° – (50° + 30°)C = 90° – 80°C = 10°

২. সমকোণী ত্রিভুজ চিহ্নিতকরণ:

  • সমকোণী ত্রিভুজ চিহ্নিত করতে পূরক কোণ ব্যবহার করা হয়।
  • যদি একটি ত্রিভুজের দুটি কোণ পূরক কোণ হয়, তাহলে সেই ত্রিভুজ একটি সমকোণী ত্রিভুজ।

উদাহরণ:

একটি ত্রিভুজে, A কোণ 45° এবং B কোণ 45°। এই ত্রিভুজ কি সমকোণী?

সমাধান:

হ্যাঁ, এই ত্রিভুজ একটি সমকোণী ত্রিভুজ।

কারণ, A কোণ এবং B কোণ পূরক কোণ (45° + 45° = 90°)

৩. ভৌমিতিক সমস্যা সমাধান:

  • ভৌমিতিক সমস্যা সমাধানে পূরক কোণ ব্যবহার করা হয়।
  • অনেক ভৌমিতিক সমস্যা সমাধানে পূরক কোণের ধারণা প্রয়োজন হয়।

উদাহরণ:

একটি ভবনের ছাদে, একটি লম্বা খুঁটি আছে। খুঁটির পাদদেশ থেকে 20 মিটার দূরে একটি ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে। খুঁটির শীর্ষ থেকে ব্যক্তির চোখের কোণ কত?

সমাধান:

ধরা যাক, খুঁটির উচ্চতা h মিটার এবং ব্যক্তির চোখের কোণ θ ডিগ্রি।

জ্যামিতির সাহায্যে, আমরা লিখতে পারি:

tan θ = h / 20

এবং, আমরা জানি যে, A কোণ এবং θ কোণ পূরক কোণ (A + θ = 90°)

তাই, A কোণের মান নির্ণয় করতে পারি।

সন্নিহিত কোণ এবং পূরক কোণের মধ্যে পার্থক্য

সন্নিহিত কোণ এবং পূরক কোণ দুটি ভিন্ন ধরণের কোণ যা জ্যামিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চলুন তাদের মধ্যে মূল পার্থক্যগুলো আলোচনা করি:

১. সংজ্ঞা:

  • সন্নিহিত কোণ: একই সমতলে একই শীর্ষবিন্দু থেকে উৎপন্ন দুটি কোণ যাদের সাধারণ বাহু থাকে।
  • পূরক কোণ: একই সমতলে একই শীর্ষবিন্দু থেকে উৎপন্ন দুটি কোণ যাদের যোগফল ৯০ ডিগ্রি বা একটি সমকোণ হয়।

২. কোণের পরিমাণ:

  • সন্নিহিত কোণের পরিমাণ যেকোনো মান হতে পারে। তাদের যোগফলের কোন নির্দিষ্ট মান থাকে না।
  • পূরক কোণের যোগফল সর্বদা ৯০ ডিগ্রি হয়। একটি পূরক কোণের মান জানা থাকলে অন্য পূরক কোণের মান সহজেই পেয়ে যাওয়া যায়।

৩. অবস্থান:

  • সন্নিহিত কোণ একে অপরের পাশে অবস্থিত থাকে।
  • পূরক কোণ একে অপরের বিপরীত দিকে অবস্থিত থাকে।

৪. ব্যবহার:

  • সন্নিহিত কোণ ত্রিভুজের কোণ গণনা করা সহ বিভিন্ন ভৌমিতিক সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা হয়।
  • পূরক কোণ ত্রিভুজের কোণ গণনা করা, সমকোণী ত্রিভুজ চিহ্নিত করা সহ বিভিন্ন ভৌমিতিক সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা হয়।

উদাহরণ:

১. সন্নিহিত কোণ:

  • একটি ত্রিভুজের দুটি কোণ 50° এবং 30° হলে, তাদের সাধারণ বাহুর বিপরীত দুটি কোণ হল সন্নিহিত কোণ।

২. পূরক কোণ:

  • যদি একটি কোণ 60° হয়, তাহলে তার পূরক কোণ হবে 30° (কারণ 60° + 30° = 90°)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top