SC > গণিত > মূলদ সংখ্যা কাকে বলে? উদাহরণ দাও | মূলদ সংখ্যা চেনার উপায়

মূলদ সংখ্যা কাকে বলে? উদাহরণ দাও | মূলদ সংখ্যা চেনার উপায়

আজকে আমরা মূলদ সংখ্যা কাকে বলে? উদাহরণ দাও | মূলদ সংখ্যা চেনার উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করব।

মূলদ সংখ্যা

মূলদ সংখ্যা কাকে বলে?

মূলদ সংখ্যা হল সেই সকল সংখ্যা যা দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায় (শূন্য দিয়ে ভাগ করা ছাড়া)।

আবার বলা যায়, “মূলদ সংখ্যা” বা “বর্গমূল সংখ্যা” হল এমন সংখ্যা যা একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার বর্গ হলে। অর্থাৎ, যদি a হয় একটি সংখ্যা এবং b হয় এর বর্গমূল, তবে b হবে a-এর মূলদ সংখ্যা। যেমন, ৯ এর বর্গমূল ৩, কারণ 32 =9।

অন্য কথায়, মূলদ সংখ্যাকে a/b আকারে প্রকাশ করা যায়, যেখানে a এবং b পূর্ণ সংখ্যা, এবং b ≠ 0।

মূলদ সংখ্যার কিছু বৈশিষ্ট্য :

  • সকল পূর্ণ সংখ্যা মূলদ সংখ্যা।
  • দশমিক আকারে প্রকাশিত সসীম ঘর এবং পুনরাবৃত্তিমূলক দশমিক সংখ্যা মূলদ সংখ্যা।
  • অমূলদ সংখ্যার সাথে যোগ, বিয়োগ, গুণ বা ভাগ করলে ফলাফল মূলদ সংখ্যা হয় না।

মূলদ সংখ্যা সংখ্যা তত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এগুলো বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়া এবং সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়।

মূলদ সংখ্যার উদাহরণ

মূলদ সংখ্যার কিছু উদাহরণ হল:

  • 1/2
  • 3/4
  • -5/7
  • 100 (কারণ একে 100/1 হিসেবে প্রকাশ করা যায়)
  • -2 (কারণ একে -2/1 হিসেবে প্রকাশ করা যায়)

মূলদ সংখ্যার আরও উদাহরণ দেওয়া হলো:

  1. সংখ্যা ৪ এর মূলদ সংখ্যা হল ২, কারণ 22 = 4
  2. সংখ্যা ৯ এর মূলদ সংখ্যা হল ৩, কারণ 32 = 9
  3. সংখ্যা ১৬ এর মূলদ সংখ্যা হল ৪, কারণ 42 = 16
  4. সংখ্যা ২৫ এর মূলদ সংখ্যা হল ৫, কারণ 52 = 25
  5. সংখ্যা ৩৬ এর মূলদ সংখ্যা হল ৬, কারণ 62 = 36
  6. সংখ্যা ৪৯ এর মূলদ সংখ্যা হল ৭, কারণ 72 = 49
  7. সংখ্যা ৬৪ এর মূলদ সংখ্যা হল ৮, কারণ 82 = 64
  8. সংখ্যা ৮১ এর মূলদ সংখ্যা হল ৯, কারণ 92 = 81
  9. সংখ্যা ১০০ এর মূলদ সংখ্যা হল ১০, কারণ 102 = 100
  10. সংখ্যা ১২১ এর মূলদ সংখ্যা হল ১১, কারণ 112 = 121

এভাবে প্রতিটি সংখ্যার মূলদ সংখ্যা চেনা যায় এর বর্গমূলের মাধ্যমে।

মূলদ সংখ্যা চেনার উপায়

মূলদ সংখ্যা চেনার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়।

১. সংজ্ঞা ব্যবহার:

মনে রাখবেন, মূলদ সংখ্যা হল সেই সকল সংখ্যা যা দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায়।

  • যদি কোন সংখ্যা a/b আকারে প্রকাশ করা যায়, যেখানে a এবং b পূর্ণ সংখ্যা এবং b ≠ 0, তাহলে সেই সংখ্যাটি মূলদ সংখ্যা।
  • উদাহরণ:
    • 1/2 মূলদ সংখ্যা কারণ একে 1/2 আকারে প্রকাশ করা যায়, যেখানে 1 এবং 2 পূর্ণ সংখ্যা।
    • √2 মূলদ সংখ্যা নয় কারণ একে দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায় না।

২. দশমিক প্রকাশ পরীক্ষা:

  • যদি একটি সংখ্যার দশমিক প্রকাশ সসীম ঘরের হয় অথবা পুনরাবৃত্তিমূলক হয়, তাহলে সেই সংখ্যাটি মূলদ সংখ্যা।
  • উদাহরণ:
    • 0.75 মূলদ সংখ্যা কারণ এটি 3/4 হিসেবে প্রকাশ করা যায়।
    • 1.6666… মূলদ সংখ্যা কারণ এটি 16/9 হিসেবে প্রকাশ করা যায়।
  • তবে, এই পদ্ধতি ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকতে হবে কারণ কিছু দশমিক সংখ্যা অসীম এবং অ-পুনরাবৃত্তিমূলক হয়, যা মূলদ সংখ্যাও হতে পারে।
    • উদাহরণ: √2-এর দশমিক প্রকাশ অসীম এবং অ-পুনরাবৃত্তিমূলক, কিন্তু এটি একটি অমূলদ সংখ্যা।

৩. ভগ্নাংশ রূপান্তর:

  • যদি একটি সংখ্যা ভগ্নাংশ আকারে রূপান্তর করা যায়, যেখানে হার এবং লব্ধ উভয়ই পূর্ণ সংখ্যা, তাহলে সেই সংখ্যাটি মূলদ সংখ্যা।
  • উদাহরণ:
    • 1.25 কে 5/4 ভগ্নাংশে রূপান্তর করা যায়, তাই এটি একটি মূলদ সংখ্যা।
  • তবে, এই পদ্ধতি ব্যবহার করার সময় মনে রাখতে হবে যে কিছু সংখ্যা ভগ্নাংশ আকারে রূপান্তর করা সম্ভব নয়, যা মূলদ সংখ্যাও হতে পারে।
    • উদাহরণ: √2 কে ভগ্নাংশ আকারে রূপান্তর করা সম্ভব নয়, কিন্তু এটি একটি অমূলদ সংখ্যা।

৪. মূল সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা:

  • যদি একটি সংখ্যাকে একটি মূল সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে একটি পূর্ণ সংখ্যা পাওয়া যায়, তাহলে সেই সংখ্যাটি মূলদ সংখ্যা।
  • উদাহরণ:
    • 10 কে 2 দ্বারা ভাগ করে 5 পাওয়া যায়, তাই 10 একটি মূলদ সংখ্যা।

১ (এক) মূলদ সংখ্যা নাকি অমূলদ সংখ্যা

১ (এক) একটি মূলদ সংখ্যা।

মূলদ সংখ্যার সংজ্ঞা অনুসারে, এগুলো এমন সংখ্যা যা দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায়।

১ (এক) কে 1/1 হিসেবে প্রকাশ করা যায়, যেখানে 1 এবং 1 উভয়ই পূর্ণ সংখ্যা।

তাই, সংজ্ঞার ভিত্তিতে ১ (এক) কে একটি মূলদ সংখ্যা বলা যায়।

মূলদ সংখ্যার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল:

  • এগুলোকে দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায়।
  • এদের দশমিক প্রকাশ সসীম ঘরের অথবা পুনরাবৃত্তিমূলক হয়।
  • এদের বর্গমূল একটি মূলদ সংখ্যা।

১ (এক) এই সকল বৈশিষ্ট্য পূরণ করে।

  • একে 1/1 হিসেবে প্রকাশ করা যায়।
  • এর দশমিক প্রকাশ 1.0000…, যা সসীম ঘরের পুনরাবৃত্তিমূলক।
  • এর বর্গমূল ১, যা একটি মূলদ সংখ্যা।

অমূলদ সংখ্যা হল এমন সংখ্যা যা দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায় না।

উদাহরণ: √2 (বর্গমূল দুই), π (পাই), e (ইউলারের সংখ্যা)।

১ (এক) কে দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায়, তাই এটি একটি অমূলদ সংখ্যা নয়।

পরিশেষে বলা যায়, ১ (এক) একটি মূলদ সংখ্যা এবং অমূলদ সংখ্যা নয়।

০ (শূন্য) কি মূলদ সংখ্যা?

হ্যাঁ, ০ (শূন্য) একটি মূলদ সংখ্যা

মূলদ সংখ্যার সংজ্ঞা অনুসারে, এগুলো এমন সংখ্যা যা দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায়।

০ (শূন্য) কে 0/1 হিসেবে প্রকাশ করা যায়, যেখানে 0 এবং 1 উভয়ই পূর্ণ সংখ্যা।

তাই, সংজ্ঞার ভিত্তিতে ০ (শূন্য) কে একটি মূলদ সংখ্যা বলা যায়।

তবে, ঐতিহাসিক এবং গাণিতিক কারণে, ০ (শূন্য) কে প্রায়শই মূলদ সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।

  • কারণ ১: ০ (শূন্য) কে অন্য কোন সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা যায় না, যা মূলদ সংখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
  • কারণ ২: ০ (শূন্য) যোগ করলে বা বিয়োগ করলে ফলাফল একই থাকে, যা মূলদ সংখ্যার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

তবে, আধুনিক গণিতে ০ (শূন্য) কে একটি মূলদ সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

  • কারণ এটি সেট তত্ত্ব এবং গাণিতিক বিশ্লেষণের মতো ক্ষেত্রগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • কারণ এটি ০ (শূন্য) কে বাদ দেওয়ার ফলে গাণিতিক ধারণাগুলিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

পরিশেষে, ০ (শূন্য) কে মূলদ সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হবে কিনা তা নির্ভর করে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রসঙ্গের উপর।

আরও পড়ুন: গড় কাকে বলে? উদাহরণ,গড় নির্ণয়ের সূত্র, প্রকারভেদ, সুবিধা ও অসুবিধা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top