SC > বাংলা ব্যাকরণ > ভাষা কাকে বলে? ভাষার বৈশিষ্ট্য

ভাষা কাকে বলে? ভাষার বৈশিষ্ট্য

গলনালি মুখবিবর, কন্ঠ, জিভ, তালু, দাঁত, নাক প্রভৃতি প্রত্যঙ্গ দিয়ে মানুষ নানারকম ধ্বনি তৈরি করে। একবার একা দেখে ধ্বনি দিয়ে তৈরি হয় শব্দ। শব্দের গুচ্ছ দিয়ে বাক্য তৈরি হয়। বাক্য দিয়ে মানুষ মনের ভাব আদান-প্রদান করে। মনের ভাব প্রকাশক এসব বাক্যের সমষ্টিকে ভাষা বলে। আজকের আর্টিকেলে আমরা ভাষা কাকে বলে? ভাষার বৈশিষ্ট্য, বাসার প্রকারভেদ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ভাষা কাকে বলে

ভাষা কাকে বলে? ভাষা কি? ভাষার সংঙ্গা

বাগযন্ত্রের ধারা উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে ভাষা বলে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাষাকে কেউ উঁচু-নিচু করে তৈরি করার ও হাত দিয়ে অনুভব করার ব্রেইল ভাষা; আবার বাক প্রতিবন্ধীদের বোঝানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ইশারা ভাষা মানুষ তৈরি করেছে।

এক কথায় বলা যায়, মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম ভাষা। মানুষের মুখে উচ্চারিত অর্থবোধক ও মনোভাব প্রকাশক ধ্বনি সমষ্টিকে ভাষা বলে। ভাষার মূল উপাদান ধ্বনি। আর ভাষার মূল উপকরণ হলো বাক্য। কারন একটা সম্পূর্ণ বাক্যই ভাষার প্রাণ। বাক্য ব্যতীত ভাষা প্রাণহীন।

বিভিন্ন ভাষাবিদ ভাষাকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। ভাষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় এর মতে, “মনের ভাব-প্রকাশের জন্য, বাগ্‌যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনি দ্বারা নিষ্পন্ন, কোনো বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে প্রযুক্ত, শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে।”

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র মতে, “মনুষ্য জাতি যেসব ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টির সাহায্যে মনের ভাব প্রকাশ করে তাকে ভাষা বলা হয়ে থাকে।”

ড. মুহম্মদ এনমুল হক বলেছেন, “মানুষ বাগ্‌যন্ত্রের সাহায্যে সমাজভুক্ত জনগণের বোধগম্য যে সমস্ত ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি উচ্চারণ করে সে সমস্ত ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে ভাষা বলে।”

ড. সুকুমার সেনের মতে, “মানুষের উচ্চারিত, অর্থবহ বহুজনবোধ্য ধ্বনিসমষ্টিই ভাষা।”

ড. মুহম্মদ আব্দুল হাই এর মতে, “এক এক সমাজের সকল মানুষের উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনিসমষ্টিই ভাষা।”

বাংলা ও ব্যাকরণ এর মধ্যে ভাষা আগে সৃষ্টি হয়েছে। জনগোষ্ঠীর ভেদে বাক্যের গঠন আলাদা হয়, ভাষাও আলাদা হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, বিহার, উড়িষ্যা ও আসামের কয়েকটা অঞ্চলের মানুষের ভাষা বাংলা। মাতৃভাষী মোট জনসংখ্যার ভিত্তিতে বাংলা পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। বাংলা ভাষার নিকটতম আত্মীয় অহমিয়া ও উড়িয়া। ধ্রুপদী ভাষার সংস্কৃত ও পালির সাথে বাংলার ভাষার রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আশা করি ভাষা কাকে বলে সে সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।

ভাষার বৈশিষ্ট্য:

১) স্বতন্ত্রতা: ভাষার প্রতীকগুলোর অর্থ যাদৃচ্ছিক এবং অনির্বাচিত। অর্থাৎ, শব্দ এবং তাদের অর্থের মধ্যে কোন প্রাকৃতিক সম্পর্ক নেই।

২) প্রণালীবদ্ধতা: ভাষার নিয়ম-কানুন থাকে। ধ্বনি, শব্দ, বাক্য গঠন – সবকিছুই নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে।

৩) অর্থবহতা: ভাষার প্রতীক এবং নিয়মকানুন ব্যবহার করে আমরা আমাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারি।

৪) উৎপাদনশীলতা: ভাষা ব্যবহার করে আমরা নতুন নতুন বাক্য তৈরি করতে পারি।

৫) গতিশীলতা: ভাষা স্থির নয়। সময়ের সাথে সাথে ভাষার পরিবর্তন হয়। নতুন শব্দ যুক্ত হয়, পুরনো শব্দ বাদ পড়ে যায়, এবং অর্থও পরিবর্তিত হতে পারে।

৬) সাংস্কৃতিক: ভাষা সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভাষা আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধ বহন করে।

৭) সার্বজনীন: মানুষের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ভাষা অপরিহার্য।

৮) শিখিত: ভাষা শেখা হয়। জন্মের সময় আমরা ভাষা জানি না। আমরা পরিবার, সমাজ এবং পরিবেশের মাধ্যমে ভাষা শিখি।

৯) বহুমুখী: ভাষার বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে। আমরা ভাষা ব্যবহার করে যোগাযোগ করি, তথ্য প্রদান করি, শিক্ষা দিই, বিনোদন করি, এবং অনেক কিছু করি।

১০) জটিল: ভাষা একটি জটিল ব্যবস্থা। ভাষার নিয়মকানুন, ব্যাকরণ, শব্দভাণ্ডার, এবং ব্যবহার সম্পর্কে আমরা এখনও অনেক কিছু জানি না।

এই বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড়াও আরও অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ভাষাকে অনন্য করে তোলে। ভাষা আমাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতাকে প্রকাশ করার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।

ভাষার মৌলিক অংশ কয়টি ও কী কী?

প্রত্যেক ভাষারই চারটি মৌলিক অংশ থাকে। যথা –

  • ধ্বনি
  • শব্দ
  • অর্থ
  • বাক্য

আবার অনেক ব্যাকরণ বইয়ে দেখা যায় যে বাংলা ভাষার মৌলিক অংশ তিনটি।

  • ধ্বনি
  • শব্দ
  • বাক্য

কিন্তু প্রচলিত মতামত চারটির পক্ষে।

ভাষা কত প্রকার ও কি কি? | বাংলা ভাষার মৌলিক রূপ বা রীতি কয়টি?

ভাষার মৌলিক রূপ বা রীতি দুইটি। অর্থাৎ ভাষা ২ প্রকার। যথা –

  • কথ্য ভাষা রীতি
  • লেখ্য ভাষা রীতি

মৌখিক বা কথ্য ভাষা রীতি

কথ্য ভাষারীতি ভাষার মূল রূপ। কথ্য ভাষা রীতির উপর ভিত্তি করে লেখ্য ভাষারীতির রূপ তৈরি হয়। স্থান, কালভেদে ভাষার যে পরিবর্তন ঘটে তা মূলত কথ্য ভাষারীতির পরিবর্তন। তাই কথ্য ভাষারীতির পরিবর্তনের ফলে নতুন নতুন ভাষা ও উপভাষার সৃষ্টি হয়। এটি আবার দুই ধরণের হয়।

  • আঞ্চলিক ভাষা
  • সার্বজনীন ভাষা

আঞ্চলিক ভাষা, আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য

আঞ্চলিক ভাষা বলতে একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে বহুল ব্যবহৃত ভাষাকে বোঝায়। এই ভাষাগুলির নিজস্ব ব্যাকরণ, শব্দভাণ্ডার এবং উচ্চারণ রীতি থাকে।

বাংলাদেশে কিছু উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক ভাষা হল:

  • চট্টগ্রামী: চট্টগ্রাম বিভাগে প্রচলিত।
  • সিলেটি: সিলেট বিভাগে প্রচলিত।
  • রংপুরী: রংপুর বিভাগে প্রচলিত।
  • ময়মনসিংহী: ময়মনসিংহ বিভাগে প্রচলিত।
  • বরিশালী: বরিশাল বিভাগে প্রচলিত।
  • ঢাকাইয়া: ঢাকা বিভাগে প্রচলিত।

আঞ্চলিক ভাষার বৈশিষ্ট্য:

  • স্থানভেদে বৈচিত্র্য: বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে শব্দভাণ্ডার, ব্যাকরণ এবং উচ্চারণ রীতিতে বৈচিত্র্য থাকে।
  • মৌখিক ঐতিহ্য: অনেক আঞ্চলিক ভাষার লিখিত রূপ নেই। এগুলি মৌখিক ঐতিহ্যের মাধ্যমে প্রচলিত।
  • সংস্কৃতির বাহক: আঞ্চলিক ভাষাগুলি একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বহন করে।
  • জীবন্ত ভাষা: আঞ্চলিক ভাষাগুলি জীবন্ত ভাষা। এগুলি মানুষ প্রতিদিনের জীবনে ব্যবহার করে।

আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব:

  • ভাষাগত বৈচিত্র্য: আঞ্চলিক ভাষাগুলি বিশ্বের ভাষাগত বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করে।
  • সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: আঞ্চলিক ভাষাগুলি একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধারণ করে।
  • জ্ঞানের ভাণ্ডার: আঞ্চলিক ভাষাগুলিতে অনেক ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ধারণ করে।
  • মানুষের অধিকার: আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার অধিকার একটি মৌলিক মানবাধিকার।

সার্বজনীন ভাষা এবং সার্বজনীন ভাষার বৈশিষ্ট্য

সার্বজনীন ভাষা বলতে এমন একটি কাল্পনিক ভাষা বোঝায় যা বিশ্বের সকল মানুষের দ্বারা সহজেই বোঝা এবং ব্যবহার করা যায়। এই ধারণাটি বহু শতাব্দী ধরে বিদ্যমান, এবং এটি নিয়ে অনেক বিতর্কও রয়েছে।

সার্বজনীন ভাষার কিছু সম্ভাব্য বৈশিষ্ট্য হল:

  • সহজ শেখা: এই ভাষাটি শেখা সহজ হওয়া উচিত, যাতে যেকোনো ব্যক্তি, তার পটভূমি বা বয়স নির্বিশেষে, দ্রুত এটি শিখতে পারে।
  • স্পষ্ট ব্যাকরণ: এই ভাষার ব্যাকরণ স্পষ্ট এবং সুসঙ্গত হওয়া উচিত, যাতে ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো যায়।
  • সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডার: এই ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হওয়া উচিত, যাতে মানুষ তাদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারে।
  • নমনীয়তা: এই ভাষাটি নমনীয় হওয়া উচিত, যাতে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও পরিস্থিতিতে এটি ব্যবহার করা যায়।
  • সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য: এই ভাষাটি সকলের দ্বারা গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত, যাতে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর উপর আধিপত্য বিস্তার না করে।

তবে, এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে সার্বজনীন ভাষার ধারণাটি বিতর্কিত। অনেকে মনে করেন যে এটি একটি অসম্ভব বা অবাঞ্ছিত লক্ষ্য। তারা যুক্তি দেন যে বিভিন্ন ভাষা বিশ্বের বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে, এবং একটি ভাষা সকলের জন্য চাপিয়ে দেওয়া ভাষাগত বৈচিত্র্য হ্রাস করবে এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় হারানোর ঝুঁকি তৈরি করবে।

অন্যরা মনে করেন যে সার্বজনীন ভাষা বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ উন্নত করতে এবং ভুল বোঝাবুঝি কমাতে সাহায্য করতে পারে। তারা যুক্তি দেন যে এটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বাণিজ্যকে সহজতর করবে এবং শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করবে।

লেখ্য ভাষা: ধারণা, বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার

লেখ্য ভাষা হলো মৌখিক ভাষার প্রতীকীয় উপস্থাপনা। এটি লিখিত চিহ্ন ব্যবহার করে মানুষের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং ধারণা প্রকাশ করে। লেখ্য ভাষা ছাড়া, আমরা ইতিহাস, জ্ঞান এবং সংস্কৃতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহন করতে পারতাম না।

লেখ্য ভাষার বৈশিষ্ট্য:

  • প্রতীকী: লেখ্য ভাষার প্রতীক (যেমন বর্ণ, শব্দ) মৌখিক ভাষার ধ্বনি বা শব্দের প্রতিনিধিত্ব করে।
  • স্থায়ী: লেখ্য ভাষা সময়ের সাথে সাথে টিকে থাকে, যা আমাদের অতীত সম্পর্কে জানতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে।
  • সার্বজনীন: লেখ্য ভাষা স্থান ও সময়ের বাধা অতিক্রম করে।
  • ব্যবস্থিত: লেখ্য ভাষার নিয়ম ও ব্যাকরণ রয়েছে যা অর্থ স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে সাহায্য করে।

লেখ্য ভাষার ব্যবহার:

  • যোগাযোগ: লেখ্য ভাষা ব্যবহার করে আমরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারি। এটি ব্যক্তিগত ও পেশাদার উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
  • জ্ঞান সংরক্ষণ: লেখ্য ভাষা ব্যবহার করে আমরা জ্ঞান, তথ্য এবং ধারণা সংরক্ষণ করতে পারি। বই, নিবন্ধ, গবেষণাপত্র ইত্যাদি লেখ্য ভাষার মাধ্যমে জ্ঞান প্রকাশ ও সংরক্ষণ করা হয়।
  • সাহিত্য: লেখ্য ভাষা সাহিত্য সৃষ্টির জন্য ব্যবহৃত হয়। উপন্যাস, কবিতা, নাটক ইত্যাদি লেখ্য ভাষার মাধ্যমে মানুষের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং কল্পনা প্রকাশ করা হয়।
  • শিক্ষা: লেখ্য ভাষা শিক্ষার জন্য অপরিহার্য। পাঠ্যপুস্তক, নোট, পরীক্ষা ইত্যাদি লেখ্য ভাষার মাধ্যমে জ্ঞান বিতরণ ও মূল্যায়ন করা হয়।
  • শাসন: লেখ্য ভাষা আইন, নীতিমালা এবং রাষ্ট্রীয় নথিপত্র তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।

লেখ্য ভাষার গুরুত্ব:

  • সংস্কৃতি: লেখ্য ভাষা একটি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধ বহন করে।
  • সমাজ: লেখ্য ভাষা সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি জ্ঞান বিতরণ, যোগাযোগ এবং সহযোগিতা সহজতর করে।
  • ব্যক্তি: লেখ্য ভাষা ব্যক্তির জ্ঞান, দক্ষতা এবং চিন্তাভাবনা প্রকাশ করতে সাহায্য করে।

লেখ ভাষা দুই প্রকার। যথা-

  • সাধু ভাষা ও
  • চলিত ভাষা

সাধু ভাষা কাকে বলে? সাধু ভাষার বৈশিষ্ট্য

সাধু ভাষা হল বাংলা ভাষার একটি রীতি যা সংস্কৃত ভাষার নিয়ম ও রীতিনীতির প্রভাবে গড়ে উঠেছে। এটি চলিত ভাষার তুলনায় বেশি আনুষ্ঠানিক ও ঐতিহ্যবাহী। ঊনিশ শতকের শুরুতে সাধুরীতির বিকাশ ঘটে। বাংলা গদ্যের প্রথম যুগের সাধুরীতির ব্যাপক প্রচলন ছিল। রাজা রামমোহন রায় প্রথম সাধু ভাষার প্রয়োগ করেন।

সাধু ভাষার বৈশিষ্ট্য:

  • সাধু রীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ এক বিশেষ গঠন পদ্ধতি মেনে চলে।
  • সংস্কৃত শব্দ: সাধু ভাষায় প্রচুর সংস্কৃত শব্দ ব্যবহৃত হয় এবং এ রীতি গুরুগম্বীর।
  • ক্রিয়ার রূপ: সাধু ভাষায় ক্রিয়ার বিভিন্ন রূপ ব্যবহৃত হয়, যেমন -অ, -ই, -উ, -তে, -তে হইয়া, ইত্যাদি।
  • সর্বনাম: সাধু ভাষায় ‘আমি’, ‘তুমি’, ‘সে’ ইত্যাদির পরিবর্তে ‘আপনি’, ‘তুমি’, ‘তিনি’ ইত্যাদি সর্বনাম ব্যবহৃত হয়।
  • বাক্য গঠন: সাধু ভাষায় বাক্য গঠন চলিত ভাষার তুলনায় বেশি জটিল ও আনুষ্ঠানিক হয়।
  • শব্দ: সাধু ভাষায় অনেক শব্দ ব্যবহৃত হয় যা চলিত ভাষায় ব্যবহৃত হয় না, যেমন – কেননা, কারণ, যাতে, যদি, ইত্যাদি।

সাধু ভাষার ব্যবহার:

  • ধর্মীয় অনুষ্ঠান: সাধু ভাষা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, গ্রন্থপাঠ, এবং প্রার্থনায় ব্যবহৃত হয়।
  • সাহিত্য: ঐতিহ্যবাহী বাংলা সাহিত্য, যেমন – মধ্যযুগীয় কবিতা, উপন্যাস, নাটক ইত্যাদিতে সাধু ভাষা ব্যবহৃত হত।
  • আনুষ্ঠানিক ভাষা: আনুষ্ঠানিক বক্তৃতা এবং আইনি দলিলে সাধু ভাষা ব্যবহৃত হয়।
  • শিক্ষা: ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা ব্যবস্থায় সাধু ভাষা ব্যবহার করা হত।

আজকের দিনে সাধু ভাষার ব্যবহার কমে গেছে। বেশিরভাগ মানুষ চলিত ভাষায় কথা বলে এবং লেখে। তবে, সাধু ভাষা এখনও আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

চলিত ভাষা কাকে বলে? চালিত ভাষার বৈশিষ্ট্য

চলিত ভাষা হলো বাংলা ভাষার সবচেয়ে প্রচলিত রূপ যা রোজকার কথোপকথনে ব্যবহৃত হয়। এটি আঞ্চলিক ভাষার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত এবং স্থানভেদে কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। চলিত রীতির প্রবর্তনের প্রমথ চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য।

চলিত ভাষার বৈশিষ্ট্য:

  • সহজবোধ্য: চলিত ভাষা সহজবোধ্য এবং বোঝার জন্য সহজ।
  • সংক্ষিপ্ত: চলিত ভাষায় অনেক শব্দ বাদ দিয়ে কথা বলা হয়।
  • অস্পষ্ট: চলিত ভাষায় অনেক অস্পষ্ট শব্দ এবং বাক্য ব্যবহার করা হয়।
  • অলঙ্কার: চলিত ভাষায় অনেক অলঙ্কার ব্যবহার করা হয়।
  • আঞ্চলিকতা: বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষ বিভিন্নভাবে কথা বলে।
  • অসঙ্গতি: চলিত ভাষায় অনেক অসঙ্গতি থাকে।
  • অঙ্গভঙ্গি ও মুখের ভাব: চলিত ভাষায় শুধু শব্দ দিয়েই অর্থ প্রকাশ করা হয় না, বরং অঙ্গভঙ্গি ও মুখের ভাবও ব্যবহার করা হয়।

চলিত ভাষার ব্যবহার:

  • রোজকার কথোপকথন: চলিত ভাষা আমরা প্রতিদিনের জীবনে বন্ধু, পরিবার এবং অন্যদের সাথে কথা বলার জন্য ব্যবহার করি।
  • মাধ্যম: চলিত ভাষা গান, কবিতা, নাটক, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
  • সাহিত্য: আধুনিক বাংলা সাহিত্যে চলিত ভাষা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
  • শিক্ষা: বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলিত ভাষার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

চলিত ভাষার গুরুত্ব:

  • যোগাযোগ: চলিত ভাষা মানুষের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করে তোলে।
  • সংস্কৃতি: চলিত ভাষা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বাহক।
  • সাহিত্য: চলিত ভাষা সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে।
  • জাতীয় ঐক্য: চলিত ভাষা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ঐক্য বোধ জাগ্রত করে।

সাধুর চরিত্র রীতির বিভিন্ন পদের রূপভেদ

সাধু রীতি চলিত রীতি
জুতাজুতো
পূজাপূজো
সর্পসাপ
সুতাসুতো
মস্তকমাথা
বিশেষ্য পদ
বন্যবুনো
রঙ্গিনরঙিন
শুষ্ক / শুকনাশুকনো
সাতিশয়অত্যন্ত
কিয়ৎক্ষণকিছুক্ষণ
বিশেষণ
কেহকেউ
তাহাকেতাকে
তাঁহারতাঁর
যাহা যা
ইহাদেরএদের
উহাওটা / ও
সর্বনাম
অপেক্ষা চেয়ে
পূর্বেই আগেই
সহিতসাথে
হইতে হতে
ব্যতীত ছাড়া
নিমিত্তজন্য/ জন্যে
অব্যয় (অনুসর্গ)
আসিয়াএসে
করিলকরল
করিয়াকরে
করিবকরব
করিতেছেকরছে
করিতেছিলকরছিল
দেখিয়াদেখে
রহিয়াছেরয়েছে
হইয়াহয়ে
ক্রিয়া

সাধু ও চলিত রীতির প্রয়োগ

সাধু রীতিঃ অতঃপর তাহারা চলিয়া গেল।

চলিত রীতিঃ তারপর তারা চলে গেল।

সাধু রীতিঃ যে কথা একবার জমিয়ে বলা গিয়াছে, তাহার পর তা ফেনাইয়া ব্যাখ্যা করা চলে না।

চলিত রীতিঃ যে কথা একবার জমে বলা গেছে, তারপর তা ফেনিয়ে ব্যাখ্যা করা চলে না।

সাধু রীতিঃ সে আসিবে বলিয়া ভরসাও করিতেছি না।

চলিত রীতিঃ সে আসবে বলে ভরসাও করছি না।

ভাষা নিয়ে বিগত পরীক্ষায় আসা MCQ প্রশ্নসমূহ

১. সাধু ভাষার বৈশিষ্ট্য কোনটি?

  • গুরুচণ্ডাল
  • গুরুগম্ভীর
  • অবৈধ্য
  • দুর্বোধ্য

২. চলিতির শব্দ কোনটি?

  • শুষ্ক
  • শুকনা
  • তোলা
  • তুলো

৩. ভাষার মৌলিক রীতি কোনটি?

  • বক্তৃতা রীতি
  • লেখার রীতি
  • কথা বলার রীতি
  • লেখার ও বলার রীতি

৪. ভাষার কোন রীতি পরিবর্তনশীল?

  • সাধু রীতি
  • চলিত রীতি
  • লেখ্য রীতি
  • কথ্য রীতি

৫. ‘বাঙালি’ উপভাষা অঞ্চল কোনটি?

  • নদীয়া
  • ত্রিপুরা
  • পুরুলিয়া
  • বরিশাল

আজ এখানেই শেষ করছি। আশা করি ভাষা কাকে বলে? ভাষার বৈশিষ্ট্য, ভাষার প্রকারভেদ ইত্যাদি সম্পর্কে বুঝতে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top