SC > বিজ্ঞান > বিজ্ঞান কি? বিজ্ঞান কাকে বলে? বিজ্ঞানের জনক কে?

বিজ্ঞান কি? বিজ্ঞান কাকে বলে? বিজ্ঞানের জনক কে?

বিজ্ঞান হলো প্রকৃতির রহস্য উদ্ঘাটন এবং মানবজীবনের উন্নতির জন্য অনুসন্ধান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এবং প্রমাণের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা একটি পদ্ধতিগত জ্ঞান। এটি প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আজকের আর্টিকেলে আমরা বিজ্ঞান কি? বিজ্ঞান কাকে বলে? বিজ্ঞানের জনক কে? ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

বিজ্ঞান কি? / বিজ্ঞান বলতে কী বোঝায়?

বিজ্ঞান হলো জ্ঞানের একটি শাখা যা পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এবং যুক্তি ব্যবহার করে প্রকৃতির নিয়ম, ঘটনা, এবং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলির সঠিক ব্যাখ্যা ও পূর্বানুমান প্রদান করে। বিজ্ঞান আমাদের চারপাশের পৃথিবী, জীবজগত, মহাবিশ্ব, এবং এর সবকিছুর গঠন, কার্যপ্রণালী, এবং বিবর্তন সম্পর্কে গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করে।

বিজ্ঞান দুটি প্রধান শাখায় বিভক্ত:

  1. প্রাকৃতিক বিজ্ঞান: এটি জড় এবং জীবের মধ্যে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। উদাহরণস্বরূপ, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান ইত্যাদি।
  2. সামাজিক বিজ্ঞান: এটি মানুষের সমাজ, সামাজিক সম্পর্ক, এবং সাংস্কৃতিক অগ্রগতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। উদাহরণস্বরূপ, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি।

বিজ্ঞান জ্ঞানের জন্য একটি কাঠামোগত পদ্ধতি প্রদান করে, যা মানব জাতির প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নয়ন, এবং দৈনন্দিন জীবনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞান কাকে বলে? / বিজ্ঞানের সংজ্ঞা

বিভিন্ন দার্শনিক ও বিজ্ঞানী তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিয়েছেন। তাদের কিছু বিখ্যাত সংজ্ঞা নিচে দেওয়া হলো:

১. অ্যারিস্টটল (Aristotle)

  • সংজ্ঞা: অ্যারিস্টটল বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিয়েছেন “সর্বজনীন জ্ঞান” হিসেবে। তার মতে, বিজ্ঞান হলো এমন একটি জ্ঞান যা প্রাকৃতিক নিয়ম এবং সত্ত্বার মৌলিক রূপ সম্পর্কে ধারণা দেয়।
  • দৃষ্টিভঙ্গি: তিনি বিজ্ঞানের প্রতি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিলেন, যা প্রকৃতির নিয়ম ও কার্যকারণ সম্পর্কের অনুসন্ধান করে।

২. রেনে ডেকার্ত (René Descartes)

  • সংজ্ঞা: রেনে ডেকার্ত বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিয়েছেন একটি প্রণালী হিসেবে, যা অনুসরণ করে নির্দিষ্ট ও প্রমাণযোগ্য জ্ঞান অর্জন করা যায়।
  • দৃষ্টিভঙ্গি: তিনি বিজ্ঞানের ভিত্তিতে যুক্তি এবং অনুসন্ধানের গুরুত্ব আরোপ করেছেন, যা আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার ভিত্তি তৈরি করে।

৩. ফ্রান্সিস বেকন (Francis Bacon)

  • সংজ্ঞা: বেকন বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিয়েছেন “জ্ঞান হলো শক্তি” বলে। তার মতে, প্রকৃতির নিয়ম এবং প্রাকৃতিক ঘটনাসমূহের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করার মাধ্যম হলো বিজ্ঞান।
  • দৃষ্টিভঙ্গি: বেকন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন এবং একে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সত্য অনুসন্ধানের একটি পদ্ধতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

৪. কার্ল পপার (Karl Popper)

  • সংজ্ঞা: পপার বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিয়েছেন এমন একটি পদ্ধতি হিসেবে, যা একটি পরীক্ষণযোগ্য বা খণ্ডনযোগ্য তত্ত্বের ভিত্তিতে গড়ে উঠে। বিজ্ঞান হলো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে তত্ত্ব বা হাইপোথিসিসকে পরীক্ষা করা হয় এবং খণ্ডিত হলে তা পরিবর্তিত হয়।
  • দৃষ্টিভঙ্গি: পপার বিজ্ঞানের প্রগতিশীলতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন, যেখানে একটি তত্ত্ব সবসময় নতুন তথ্য এবং পর্যবেক্ষণ দ্বারা পরীক্ষা করা হয়।

৫. আইজাক নিউটন (Isaac Newton)

  • সংজ্ঞা: নিউটন বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিয়েছেন এমন একটি পদ্ধতি হিসেবে যা প্রকৃতির শক্তি এবং তার প্রভাবগুলির অনুসন্ধান ও গণিতের মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক নির্ধারণ করে।
  • দৃষ্টিভঙ্গি: নিউটন বিজ্ঞানের ভিত্তিতে যান্ত্রিক প্রকৃতি এবং এর নিয়মের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন, যা শাস্ত্রীয় পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

৬. টমাস কুন (Thomas Kuhn)

  • সংজ্ঞা: কুন বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিয়েছেন একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ প্যারাডাইম হিসেবে, যেখানে বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট নিয়ম ও মডেলের অধীনে কাজ করেন। বিজ্ঞান হলো একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া যা কিছু নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্যারাডাইম শিফটের মাধ্যমে বিকশিত হয়।
  • দৃষ্টিভঙ্গি: কুন বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের ধারণা উপস্থাপন করেন, যেখানে বিজ্ঞান ক্রমাগত নতুন তত্ত্বের মাধ্যমে উন্নত হয়।

৭. আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein)

  • সংজ্ঞা: আইনস্টাইন বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিয়েছেন প্রকৃতির রহস্য উন্মোচনের একটি মাধ্যম হিসেবে। বিজ্ঞান হলো প্রকৃতির মৌলিক নিয়মগুলির অনুসন্ধান এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের একটি প্রচেষ্টা।
  • দৃষ্টিভঙ্গি: আইনস্টাইন বিজ্ঞানের প্রতি একটি গভীর দার্শনিক ও অনুসন্ধানমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন, যা পদার্থবিজ্ঞানের অনেক মৌলিক তত্ত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

প্রত্যেক দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী তাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপট এবং দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিজ্ঞানের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন, যা বিজ্ঞানের বহুমাত্রিকতা এবং তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর আলোকপাত করে।

আরও পড়ুন: হিসাববিজ্ঞানের জনক কে?

বিজ্ঞানের জনক কে?

বিজ্ঞানের জনক হিসেবে সাধারণত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলকে (Aristotle) গণ্য করা হয়। অ্যারিস্টটল প্রাচীন গ্রিসের একজন মহান দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী ছিলেন, যিনি প্রাকৃতিক দর্শনের বিভিন্ন শাখায় অবদান রেখেছিলেন। তিনি প্রাকৃতিক বিশ্ব এবং তার বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণা করেছিলেন এবং বিজ্ঞানকে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ জ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

অ্যারিস্টটল প্রাণীবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, নীতি, এবং জ্ঞানতত্ত্বের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণা ও তত্ত্ব প্রদান করেন। তার কাজগুলো পরবর্তী যুগের বিজ্ঞানীদের জন্য প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল এবং আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করতে সাহায্য করেছিল। এজন্যই তাকে “বিজ্ঞানের জনক” বলা হয়।

বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য

বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যগুলি বিজ্ঞানকে অন্যান্য জ্ঞান ও শৃঙ্খলাগুলি থেকে আলাদা করে। এগুলোই বিজ্ঞানের ভিত্তি, যা এর কর্মপ্রক্রিয়া এবং পদ্ধতিগত দিক নির্দেশ করে। নিচে বিজ্ঞানের কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো:

১. পর্যবেক্ষণমূলক (Observation-based)

বিজ্ঞান প্রকৃতির ঘটনা এবং প্রক্রিয়াগুলি পর্যবেক্ষণ করে। সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং তথ্য সংগ্রহ করা বিজ্ঞানের প্রথম ধাপ। বিজ্ঞানীরা কোনো ঘটনা বা বিষয়বস্তুর নির্ভুল পর্যবেক্ষণ করেন এবং সেই তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণা শুরু করেন।

২. পরীক্ষামূলক (Experimental)

বিজ্ঞান পরীক্ষার মাধ্যমে তত্ত্ব ও ধারণাগুলি পরীক্ষা করে। এটি একটি পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া, যেখানে বিজ্ঞানীরা তাদের ধারণা বা অনুমানকে পরীক্ষা করেন এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেন। পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলগুলি বিজ্ঞানকে সঠিক বা ভুল প্রমাণ করতে সহায়তা করে।

৩. যুক্তিপূর্ণ (Logical)

বিজ্ঞান যুক্তির ওপর ভিত্তি করে চলে। পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলি বিশ্লেষণ করার সময় বিজ্ঞানীরা যুক্তি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে অনুসন্ধান চালান। বিজ্ঞান সবসময় তথ্যভিত্তিক এবং তা যুক্তিসঙ্গত প্রমাণের ওপর নির্ভর করে।

৪. পদ্ধতিগত (Systematic)

বিজ্ঞান পদ্ধতিগত অনুসন্ধানের একটি শৃঙ্খলা। প্রতিটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা পরীক্ষা একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে, যা পর্যবেক্ষণ, হাইপোথিসিস, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ফলাফল এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় বিভক্ত।

৫. নিরপেক্ষ (Objective)

বিজ্ঞান সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ, যা ব্যক্তিগত মতামত বা বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হয় না। বিজ্ঞানী তাদের গবেষণায় ব্যক্তিগত পক্ষপাত বা মতামত রাখেন না এবং কেবলমাত্র পর্যবেক্ষণ এবং প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেন।

৬. সংশোধনযোগ্য (Self-correcting)

বিজ্ঞান সংশোধনযোগ্য। নতুন তথ্য বা প্রমাণের আলোকে পুরানো তত্ত্ব বা ধারণাগুলি সংশোধন বা পরিত্যাগ করা হয়। বিজ্ঞানের এই গুণটি একে একটি প্রগতিশীল ও অগ্রসরমান শৃঙ্খলা হিসেবে গড়ে তোলে।

৭. প্রমাণভিত্তিক (Evidence-based)

বিজ্ঞান সবসময় প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে চলে। কোনো তত্ত্ব বা ধারণা তখনই বৈজ্ঞানিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়, যখন তা পর্যাপ্ত প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত হয়। প্রমাণের অভাবে বিজ্ঞান নতুন অনুসন্ধানের মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।

৮. সর্বজনীন (Universal)

বিজ্ঞান সর্বজনীন এবং সর্বত্র প্রযোজ্য। বিজ্ঞান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নিয়ম ও তত্ত্বগুলি বিশ্বের যে কোনো জায়গায় একইভাবে প্রযোজ্য হয়। উদাহরণস্বরূপ, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর যে কোনো স্থানে একই নিয়মে কাজ করে।

৯. পূর্বানুমানযোগ্য (Predictive)

বিজ্ঞান পূর্বানুমান করার ক্ষমতা রাখে। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং সূত্রগুলি ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে তা পূর্বানুমান করতে সক্ষম। এই পূর্বানুমান বিজ্ঞানকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন আবহাওয়া পূর্বাভাস, প্রযুক্তি উন্নয়ন ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করে।

১০. মৌলিক ও প্রয়োগমুখী (Fundamental and Applied)

বিজ্ঞান দুটি প্রধান ধারায় বিভক্ত: মৌলিক বিজ্ঞান এবং প্রয়োগমুখী বিজ্ঞান। মৌলিক বিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বাড়ানোর চেষ্টা করে, যেখানে প্রয়োগমুখী বিজ্ঞান এই জ্ঞানকে ব্যবহারিক সমস্যার সমাধানে প্রয়োগ করে।

বিজ্ঞানের এই বৈশিষ্ট্যগুলি একে একটি শক্তিশালী এবং প্রামাণিক জ্ঞানশৃঙ্খলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিজ্ঞান কেবলমাত্র প্রকৃতির রহস্য উদঘাটন করেই থেমে থাকে না, বরং এটি মানবজীবনের উন্নতি ও অগ্রগতির পথে অসংখ্য সুযোগের দ্বার উন্মোচন করে।

বিজ্ঞানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

বিজ্ঞান মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়। এটি আমাদের জীবনের অনেক দিককে প্রভাবিত করে এবং উন্নত করে। বিজ্ঞানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিচে আলোচনা করা হলো:

১. প্রকৃতির রহস্য উন্মোচন

বিজ্ঞান প্রকৃতির রহস্য উন্মোচন করতে সহায়তা করে। এটি বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনা, যেমন গ্রহ-নক্ষত্রের গঠন, পৃথিবীর জন্ম, প্রাণের উৎপত্তি, এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বাড়ায়। বিজ্ঞান আমাদেরকে মহাবিশ্বের কর্মপ্রক্রিয়া এবং তার বিবর্তন সম্পর্কে গভীরভাবে বোঝার সুযোগ দেয়।

২. প্রযুক্তির উন্নয়ন

বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নয়নের মূল ভিত্তি। বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও আবিষ্কারগুলি আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে অবদান রেখেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, যোগাযোগ ব্যবস্থা, এবং পরিবহন ব্যবস্থায় বিজ্ঞানের অবদান অসীম। বিজ্ঞান প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তার উন্নয়নের মাধ্যমে মানবজীবনকে সহজ, দ্রুত এবং সুবিধাজনক করেছে।

৩. স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা

বিজ্ঞান চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটিয়েছে। রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, ওষুধের আবিষ্কার, এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে বিজ্ঞানের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের অবদানের ফলস্বরূপ।

৪. কৃষির উন্নয়ন

বিজ্ঞান কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। উন্নত কৃষি প্রযুক্তি, সার, কীটনাশক, এবং জেনেটিক গবেষণা কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়িয়েছে। বিজ্ঞান আমাদের খাদ্য উৎপাদন, মাটির গুণগত মান, এবং প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নতি করতে সহায়তা করে, যা বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৫. শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জন

বিজ্ঞান আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের পথ প্রদর্শন করে এবং তাদের মধ্যে অনুসন্ধানী মনোভাব গড়ে তোলে। বিজ্ঞান গবেষণা, সমস্যা সমাধান, এবং যুক্তিভিত্তিক চিন্তাভাবনা করতে সহায়তা করে, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে।

৬. পরিবেশ ও পরিবেশগত চেতনা

বিজ্ঞান পরিবেশ রক্ষা এবং এর সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আমাদেরকে পরিবেশগত সমস্যা, যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অতিব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করে। বিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা পরিবেশ রক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নের উপায়গুলি সন্ধান করতে পারি।

৭. অর্থনৈতিক উন্নয়ন

বিজ্ঞান অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন শিল্প, বাণিজ্য, এবং অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। নতুন পণ্য, সেবা, এবং উৎপাদন পদ্ধতির উদ্ভাবন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।

৮. যৌক্তিক ও সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা

বিজ্ঞান যুক্তি এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটায়। এটি আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করতে এবং প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে শেখায়। বিজ্ঞান একটি সমস্যা সমাধানের জন্য কাঠামোগত এবং যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতি প্রদানের মাধ্যমে আমাদের চিন্তাভাবনা ও দক্ষতা উন্নত করে।

৯. নতুন সম্ভাবনার অনুসন্ধান

বিজ্ঞান মানবজাতির জন্য নতুন সম্ভাবনা এবং সুযোগ সৃষ্টি করে। এটি মহাকাশ অনুসন্ধান, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতি আমাদের ভবিষ্যতের উন্নতি এবং টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

১০. মানবজীবনের মান উন্নয়ন

বিজ্ঞান মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আধুনিক জীবনযাত্রার প্রতিটি দিক, যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, পরিবহন, এবং বিনোদন বিজ্ঞানের অবদানের ওপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞানের সাহায্যে আমরা আমাদের জীবনকে সহজ, নিরাপদ, এবং সুখী করে তুলতে পারি।

শেষকথা

বিজ্ঞান মানবজাতির উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলে এবং আমাদের ভবিষ্যতের উন্নতিতে অবদান রাখে। বিজ্ঞানের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় রেখে, এটি বলাই যায় যে বিজ্ঞান ছাড়া আধুনিক সভ্যতা কল্পনা করা অসম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top