SC > গণিত > গড় কাকে বলে? উদাহরণ,গড় নির্ণয়ের সূত্র, প্রকারভেদ, সুবিধা ও অসুবিধা

গড় কাকে বলে? উদাহরণ,গড় নির্ণয়ের সূত্র, প্রকারভেদ, সুবিধা ও অসুবিধা

আজকের আর্টিকেলে আমরা গড় কাকে বলে? উদাহরণ দাও | গড় নির্ণয়ের সূত্র, প্রকারভেদ, সুবিধা ও অসুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

গড় কাকে বলে

গড় কাকে বলে?

“গড়” শব্দটি বাংলায় “average” অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি সাংখ্যিক পরিসংখ্যানের পরিস্থিতির সম্পর্কে ব্যবহৃত শব্দ। সমজাতীয় রাশিমালার অন্তর্ভুক্ত রাশিগুলোর সমষ্টিকে রাশির মােট সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে, প্রাপ্ত ভাগফলকে গড় বলে।

এক কথায় বলা যায় যে, এক জাতীয় একাধিক রাশির সমষ্টি বা যোগফলকে উক্ত রাশিগুলোর মোট সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায় তাকে ঐ রাশিগুলোর গড় বলা হয়।

গড় কাকে বলে এ সম্পর্কে আবার বলা যায় যে, একটি গ্রুপের সকল সংখ্যার যোগফলকে ঐ গ্রুপের সংখ্যার সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যে মান পাওয়া যায় তাই হলো সেই গ্রুপের গড়। যেমন –

  • একটি বাসায় যদি পাঁচ জন মানুষ থাকে এবং তাদের বয়স যদি ১২, ১৬, ১৮, ৩৪ এবং ৩৮ হয়, তবে তাদের “গড় বয়স” কত?

এই ক্ষেত্রে, গড় বয়স বের করার জন্য আমরা সকলের বয়স যোগ করব এবং ৫ দিয়ে ভাগ করব:

বা, (১২ + ১৬ + ১৮ + ৩৪ + ৩৮) / ৫ = ২২.৮

অর্থাৎ, তাদের গড় বয়স ২২.৮ বছর।

গড় নির্ণয়ের সূত্র

গাণিতিক গড় নির্ণয়ের জন্য, আমরা নিম্নলিখিত সূত্র ব্যবহার করতে পারি:

গড় = (সকল সংখ্যার যোগফল) / (সংখ্যার সংখ্যা)

উদাহরণ:

  • একটি পরীক্ষায় ৫ জন শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর যদি যথাক্রমে ৭০, ৮৫, ৯০, ৮০ এবং ৯৫ হয়, তবে তাদের “গড় নম্বর” কত? এ প্রশ্নটি বিবেচনা করুন।

এই ক্ষেত্রে, গড় নম্বর বের করার জন্য আমরা সকলের নম্বর যোগ করব এবং ৫ দিয়ে ভাগ করব:

(৭০ + ৮৫ + ৯০ + ৮০ + ৯৫) / ৫ = 84

অর্থাৎ, তাদের গড় নম্বর ৮৪।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • গড় নির্ণয়ের সময়, সকল সংখ্যাকেই বিবেচনা করতে হবে।
  • গড় সবসময় ডেটাসেটের কেন্দ্রীয় প্রবণতা নির্দেশ করে না।
  • কিছু ক্ষেত্রে, মধ্যক বা প্রচুরক গড়ের চেয়ে ভালো প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।

আপনি যদি ভাগফল নির্ণয়ের সূত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি পড়ুন: ভাগফল নির্ণয়ের সূত্র | নিঃশেষে বিভাজ্যের ক্ষেত্রে ভাজ্য, ভাজক নির্ণয়ের সূত্র

গড় এর উদাহরণ

উপরে আমরা গড় কাকে বলে এবং এর সূত্র সম্পর্কে জেনেছি। এবার গড় এর কিছু উদাহরণ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

রোজকার জীবনে:

  • একটি পরিবারে গড় আয়: ধরা যাক, একটি পরিবারে ৪ জন সদস্য আছে এবং তাদের মাসিক আয় যথাক্রমে ৳20,000, ৳30,000, ৳40,000 এবং ৳10,000। তাহলে, তাদের গড় আয় হবে:

(20,000 + 30,000 + 40,000 + 10,000) / 4 = 25,000

অর্থাৎ, তাদের গড় আয় ৳25,000।

  • একটি শ্রেণীর গড় পরীক্ষার নম্বর: ধরা যাক, একটি শ্রেণীর 30 জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষার নম্বর যথাক্রমে 50, 60, 70, 80, 90, এবং 100। তাহলে, তাদের গড় নম্বর হবে:

(50 + 60 + 70 + 80 + 90 + 100) / 30 = 73.33

অর্থাৎ, তাদের গড় নম্বর 73.33।

  • একটি দোকানে একটি পণ্যের গড় দাম: ধরা যাক, একটি দোকানে একটি পণ্যের দাম যথাক্রমে ৳100, ৳120, ৳150, এবং ৳80। তাহলে, সেই পণ্যের গড় দাম হবে:

(100 + 120 + 150 + 80) / 4 = 112.50

অর্থাৎ, সেই পণ্যের গড় দাম ৳112.50।

বিজ্ঞানে:

  • একটি পরীক্ষায় গড় তাপমাত্রা: ধরা যাক, একটি পরীক্ষায় 5 দিনের তাপমাত্রা যথাক্রমে 25°C, 28°C, 30°C, 27°C, এবং 26°C। তাহলে, সেই 5 দিনের গড় তাপমাত্রা হবে:

(25°C + 28°C + 30°C + 27°C + 26°C) / 5 = 27.2°C

অর্থাৎ, সেই 5 দিনের গড় তাপমাত্রা 27.2°C।

  • একটি জনসংখ্যার গড় আয়ু: একটি দেশের জনসংখ্যার গড় আয়ু নির্ণয় করার জন্য, সেই দেশের সকল মানুষের বয়স যোগ করে তাদের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা হয়।
  • একটি গ্রহের গড় ঘনত্ব: একটি গ্রহের গড় ঘনত্ব নির্ণয় করার জন্য, সেই গ্রহের মোট ভরকে তার আয়তন দ্বারা ভাগ করা হয়।

গড় কত প্রকার ও কি কি? | গড়ের প্রকারভেদ

গড় হলো একটি ডেটাসেটের কেন্দ্রীয় প্রবণতা নির্দেশ করে এমন একটি মান। ডেটা বিশ্লেষণ এবং পরিসংখ্যানে বিভিন্ন ধরণের গড় ব্যবহার করা হয়।

সবচেয়ে সাধারণ তিন ধরণের গড় হলো:

  1. গাণিতিক গড় (Arithmetic Mean):

এটি ডেটাসেটের সকল সংখ্যার যোগফলকে ডেটার সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে পাওয়া যায়। এটি সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত গড়।

সূত্র: গড় = (সকল সংখ্যার যোগফল) / (সংখ্যার সংখ্যা)

উদাহরণ: একটি পরীক্ষায় ৫ জন শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর যদি যথাক্রমে ৭০, ৮৫, ৯০, ৮০ এবং ৯৫ হয়, তবে তাদের গাণিতিক গড় হবে:

(৭০ + ৮৫ + ৯০ + ৮০ + ৯৫) / ৫ = 84

  1. জ্যামিতিক গড় (Geometric Mean):

এটি ডেটাসেটের সকল সংখ্যার গুণফলের বর্গমূলকে ডেটার সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে পাওয়া যায়।

সূত্র: জ্যামিতিক গড় = (সকল সংখ্যার গুণফল)^(1/n)

উদাহরণ: একটি বিনিয়োগের প্রথম বছরে লাভ হলে ৳1200 এবং দ্বিতীয় বছরে লাভ হলে ৳1800, তবে সেই বিনিয়োগের জ্যামিতিক গড় লাভ হবে:

(1200 * 1800)^(1/2) = 1497

  1. হারমনিক গড় (Harmonic Mean):

এটি ডেটাসেটের সকল সংখ্যার বিপরীতের গড়কে ডেটার সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে পাওয়া যায়।

সূত্র: হারমনিক গড় = n / (সকল সংখ্যার বিপরীতের যোগফল)

উদাহরণ: ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে ৩টি ভিন্ন পথ ব্যবহার করে লাগা সময় যথাক্রমে 4 ঘণ্টা, 5 ঘণ্টা এবং 6 ঘণ্টা হলে, সেই যাত্রার হারমনিক গড় সময় হবে:

3 / (1/4 + 1/5 + 1/6) = 4.8 ঘণ্টা

অন্যান্য ধরণের গড়:

  • বর্গমূল গড় (Root Mean Square): এটি ডেটাসেটের সকল সংখ্যার বর্গের গড়ের বর্গমূল।
  • চতুর্থমূল গড় (Quartic Mean): এটি ডেটাসেটের সকল সংখ্যার চতুর্থের গড়ের চতুর্থমূল।
  • প্রচুরক (Mode): এটি ডেটাসেটে সবচেয়ে বেশি বার আসা সংখ্যা।
  • মধ্যক (Median): এটি ডেটাসেটকে ক্রমবর্ধমান ক্রমে সাজালে, মাঝখানের সংখ্যা।

গড় ব্যবহারের সুবিধা

গড় হলো একটি ডেটাসেটের কেন্দ্রীয় প্রবণতা নির্দেশ করে এমন একটি মান। ডেটা বিশ্লেষণ এবং পরিসংখ্যানে গড় ব্যবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

1. ডেটাসেটের সারসংক্ষেপ প্রদান:

  • গড় একটি সংখ্যার মাধ্যমে একটি ডেটাসেটের মূল বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে।
  • এটি ডেটা ব্যাখ্যা এবং বোঝার সহজ করে তোলে।
  • উদাহরণস্বরূপ, একটি শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের গড় পরীক্ষার নম্বর জানলে শিক্ষকরা তাদের সামগ্রিক পারফরম্যান্স সম্পর্কে ধারণা পেতে পারবেন।

2. ডেটাসেটের তুলনা:

  • গড় ব্যবহার করে বিভিন্ন ডেটাসেটের তুলনা করা সম্ভব।
  • উদাহরণস্বরূপ, দুটি শহরের গড় তাপমাত্রা তুলনা করে বোঝা যাবে কোন শহরটি বেশি গরম বা ঠান্ডা।

3. ডেটা ভবিষ্যদ্বাণী:

  • গড় ব্যবহার করে ভবিষ্যতের ডেটা ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব।
  • উদাহরণস্বরূপ, একটি কোম্পানি গত বছরের গড় বিক্রয়ের উপর ভিত্তি করে আগামী বছরের বিক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারে।

4. গাণিতিক হিসাব:

  • গড় ব্যবহার করে বিভিন্ন গাণিতিক হিসাব করা সম্ভব।
  • উদাহরণস্বরূপ, একটি মেশিনের গড় উৎপাদন হার জানলে তার দৈনিক উৎপাদন পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব।

5. ত্রুটি হ্রাস:

  • গড় ব্যবহার করে ত্রুটি হ্রাস করা সম্ভব।
  • কারণ, গড় একটি ডেটাসেটের সকল মানের গড় প্রতিনিধিত্ব করে।
  • উদাহরণস্বরূপ, একটি পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীর একটি প্রশ্নের নম্বর ভুল হলেও গড় নম্বরের উপর তার তেমন প্রভাব পড়বে না।

6. ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন:

  • গড় ব্যবহার করে ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন করা সহজ।
  • বার চার্ট, লাইন চার্ট, এবং পাই চার্টের মতো ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনে প্রায়শই গড় ব্যবহার করা হয়।

গড় ব্যবহারের অসুবিধা

গড়, ডেটা বিশ্লেষণে একটি মূল্যবান হাতিয়ার হলেও, এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে।

গড় ব্যবহারের কিছু অসুবিধা নিম্নরূপ:

1. তথ্যের বিকৃতি:

  • গড় ডেটাসেটের সকল মানের গড় প্রতিনিধিত্ব করে।
  • কিন্তু, কিছু ক্ষেত্রে, ডেটাসেটে চরম মান (outlier) থাকতে পারে যা গড়কে বিকৃত করে।
  • উদাহরণস্বরূপ, একটি কোম্পানির কর্মীদের বেতনের গড় যদি বের করা হয় এবং যদি একজন কর্মীর বেতন অনেক বেশি বা অনেক কম হয়, তবে গড় বেতন বাস্তব চিত্র প্রতিফলিত করবে না।

2. কেন্দ্রীয় প্রবণতা সঠিকভাবে প্রকাশ করে না:

  • কিছু ক্ষেত্রে, গড় ডেটাসেটের কেন্দ্রীয় প্রবণতা সঠিকভাবে প্রকাশ করে না।
  • বিশেষ করে যখন ডেটা বিপরীত-V আকৃতির (skewed) হয়, তখন গড় মধ্যক (median) এর চেয়ে কম প্রতিনিধিত্বমূলক হতে পারে।
  • উদাহরণস্বরূপ, একটি শহরের বাসিন্দাদের আয়ের ডেটা বিপরীত-V আকৃতির হতে পারে, কারণ কিছু লোকের আয় অনেক বেশি এবং অনেকের আয় অনেক কম। এই ক্ষেত্রে, গড় আয় বাস্তব চিত্র প্রতিফলিত করবে না, কারণ এটি ধনী ব্যক্তিদের দ্বারা অতিরিক্ত প্রভাবিত হবে।

3. গাণিতিক হিসাবের জটিলতা:

  • কিছু ধরণের গড়, যেমন জ্যামিতিক গড় এবং হারমনিক গড়, গাণিতিকভাবে জটিল হতে পারে।
  • এর ফলে, এই গড়গুলি ব্যাখ্যা করা এবং বোঝা কঠিন হতে পারে।

4. ভুল ব্যাখ্যা:

  • গড় ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হলে ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে।
  • তাই, গড় ব্যবহার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা এবং ডেটার বিতরণ বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

উল্লেখ্য:

  • গড় একটি মূল্যবান হাতিয়ার, তবে এটি সীমাবদ্ধতা ছাড়া নয়।
  • ডেটা বিশ্লেষণের সময়, গড়ের পাশাপাশি মধ্যক, প্রচুরক এবং অন্যান্য পরিসংখ্যানগত পরিমাপও বিবেচনা করা উচিত।
  • ডেটার বিতরণ এবং প্রকৃতি বোঝার জন্য ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন ব্যবহার করাও গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top