বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক হচ্ছে কারক। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা কারক কাকে বলে? কারক কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা, কারক চেনার সহজ উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে আর দেরি না করে চলো কারক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেই।
Table of contents
- কারক কাকে বলে? কারক কি?
- কারক কত প্রকার ও কি কি?
- কারক চেনার সহজ উপায়:
- কর্তৃ কারক কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রকারভেদ
- কর্ম কারক কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রকারভেদ
- করণ কারক কাকে বলে? উদাহরণ দাও
- সম্প্রদান কারক কী বা কাকে বলে? উদাহরণ দাও
- অপাদান কারক কাকে বলে? উদাহরণ দাও
- অধিকরণ কারক কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রকারভেদ
- বিভক্তি কী? বিভক্তি কত প্রকার ও কি কি?
- বিভক্তির আকৃতি
কারক কাকে বলে? কারক কি?
কারক শব্দটি ভাঙলে কৃ + ণক(অক) পাওয়া যায়। যার কৃ অর্থ হলো করা আর ণক বা অক অর্থ হলো সম্পাদন করা। তাই কারক শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ হলো “যা কাজ সম্পাদন করে”।
বাংলা ব্যাকরণে, কারক বলতে বোঝায় বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সাথে নামপদ বা সর্বনাম পদের সম্পর্ক।
আসলে, ক্রিয়ার কারণ, কর্ম, উপায়, স্থান, সময়, উদ্দেশ্য ইত্যাদি বোঝাতে বাক্যে যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ব্যবহৃত হয়, তাকেই কারক বলা হয়।
উদাহরণ:
- ছেলেটি বই পড়ছে। – এই বাক্যে “ছেলেটি” ক্রিয়া (“পড়ছে”) সম্পাদন করছে, তাই “ছেলেটি” কর্তৃকারক।
- শিক্ষক ছাত্রকে শিক্ষা দিচ্ছেন। – এই বাক্যে “ছাত্র” ক্রিয়া (“শিক্ষা দিচ্ছেন”) এর কর্ম।
- কলম দিয়ে লিখছি। – এই বাক্যে “কলম” দিয়ে ক্রিয়া (“লিখছি”) সম্পাদন করা হচ্ছে, তাই “কলম” করণকারক।
কারক কত প্রকার ও কি কি?
আধুনিক বাংলা ব্যাকরণে মোট ছয় প্রকার কারক রয়েছে। এগুলো হলো –
- কর্তৃ কারক
- কর্ম কারক
- করণ কারক
- সম্প্রদান কারক
- অপাদান কারক
- অধিকরণ কারক
কারক চেনার সহজ উপায়:
কারক চেনা অনেকের জন্যই বেশ কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু কিছু সহজ নিয়ম অনুসরণ করলে আপনি সহজেই কারক চিনতে পারবেন।
কিছু সহজ নিয়ম:
১. প্রশ্ন পদ্ধতি:
- কর্তৃকারক: ক্রিয়াটি কে সম্পাদন করে? (উত্তরে যে শব্দ আসবে তাই কর্তৃকারক)
- কর্মকারক: ক্রিয়াটি কী সম্পাদন করে? (উত্তরে যে শব্দ আসবে তাই কর্মকারক)
- করণকারক: ক্রিয়াটি কী দিয়ে বা কীভাবে সম্পাদন করা হয়? (উত্তরে যে শব্দ আসবে তাই করণকারক)
- সম্প্রদানকারক: ক্রিয়াটি কে বা কাকে [কিছু] দেওয়া হয়? (উত্তরে যে শব্দ আসবে তাই সম্প্রদানকারক)
- অপাদানকারক: ক্রিয়াটি কোথায় থেকে, কখন থেকে, কিসের থেকে [শুরু/হয়]? (উত্তরে যে শব্দ আসবে তাই অপাদানকারক)
- অধিকরণকারক: ক্রিয়াটি কোথায় বা কখন সম্পাদন করা হয়? (উত্তরে যে শব্দ আসবে তাই অধিকরণকারক)
উদাহরণ:
- ছেলেটি বই পড়ছে। (এই বাক্যে, “ছেলেটি” ক্রিয়া (“পড়ছে”) সম্পাদন করছে, তাই “ছেলেটি” কর্তৃকারক।)
- শিক্ষক ছাত্রকে শিক্ষা দিচ্ছেন। (এই বাক্যে, “ছাত্র” ক্রিয়া (“শিক্ষা দিচ্ছেন”) এর কর্ম।)
- কলম দিয়ে লিখছি। (এই বাক্যে, “কলম” দিয়ে ক্রিয়া (“লিখছি”) সম্পাদন করা হচ্ছে, তাই “কলম” করণকারক।)
- বন্ধুকে বই দিলাম। (এই বাক্যে, “বন্ধুকে” বই (“দিলাম”) দেওয়া হচ্ছে, তাই “বন্ধুকে” সম্প্রদানকারক।)
- ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাচ্ছি। (এই বাক্যে, “ঢাকা” থেকে যাত্রা (“যাচ্ছি”) শুরু হচ্ছে, তাই “ঢাকা” অপাদানকারক।)
- ঢাকায় থাকি। (এই বাক্যে, “ঢাকায়” থাকা (“থাকি”) হচ্ছে, তাই “ঢাকায়” অধিকরণকারক।)
২. বিভক্তি:
প্রতিটি কারকের নিজস্ব কিছু বিভক্তি থাকে। বিভক্তি জানা থাকলে কারক চেনা সহজ হয়।
উদাহরণ:
- কর্তৃকারক: -ই, -এ, -রা, -রি, -রা
- কর্মকারক: -কে, -কেই, -মা, -ম
- করণকারক: – দিয়ে, – দ্বারা, – সহ, – এ, – ই
- সম্প্রদানকারক: -কে, -কেই, -মা, -ম
- অপাদানকারক: – থেকে, – হতে, – বাদে, – ছাড়া
- অধিকরণকারক: -এ, -ই, -ে, -য়, -তে
৩. কারকের অনুসর্গ:
কিছু কারকের নির্দিষ্ট অনুসর্গ থাকে। অনুসর্গ ব্যবহার করে বাক্যে বিশেষ্য বা সর্বনামের সাথে কারকের সম্পর্ক আরও স্পষ্টভাবে নির্দেশ করা হয়।
কারক | অনুসর্গ |
---|---|
কর্তৃকারক | – |
কর্মকারক | -কে, -কেই, -মা, -ম |
করণকারক | – দিয়ে, – দ্বারা, – সহ, – এ, – ই |
সম্প্রদানকারক | -কে, -কেই, -মা, -ম |
অপাদানকারক | – থেকে, – হতে, – বাদে, – ছাড়া |
অধিকরণকারক | -এ, -ই, -ে, -য়, -তে |
উদাহরণ:
- ছেলেটি বই পড়ছে (কর্তৃকারক: -)
- শিক্ষক ছাত্রকে শিক্ষা দিচ্ছেন (কর্মকারক: -কে)
- কলম দিয়ে লিখছি (করণকারক: – দিয়ে)
- বন্ধুকে বই দিলাম (সম্প্রদানকারক: -কে)
- ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাচ্ছি (অপাদানকারক: – থেকে)
- ঢাকায় থাকি (অধিকরণকারক: -এ)
কর্তৃ কারক কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রকারভেদ
বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কর্তৃকারক বলা হয়।
উদাহরণ:
- ছেলেটি বই পড়ছে। (এই বাক্যে, “ছেলেটি” ক্রিয়া (“পড়ছে”) সম্পাদন করছে, তাই “ছেলেটি” কর্তৃকারক।)
- মেয়েটি গান গাইছে। (এই বাক্যে, “মেয়েটি” ক্রিয়া (“গাইছে”) সম্পাদন করছে, তাই “মেয়েটি” কর্তৃকারক।)
কর্তা কারকের প্রকারভেদ
কর্তৃকারক বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদনের বৈচিত্র্য বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চার ধরণের হয়ে থাকে। এগুলো হলো –
- মুখ্য কর্তা
- প্রযোজক কর্তা
- প্রযোজ্য কর্তা
- ব্যতিহার কর্তা
১. মুখ্য কর্তা:
যখন একক ব্যক্তি, জিনিস বা স্থান স্বাধীনভাবে ক্রিয়া সম্পাদন করে তখন তাকে মুখ্য কর্তা বলে।
উদাহরণ:
- ছেলেটি বই পড়ছে। (এই বাক্যে, “ছেলেটি” স্বাধীনভাবে ক্রিয়া (“পড়ছে”) সম্পাদন করছে, তাই “ছেলেটি” মুখ্য কর্তা।)
- মেয়েটি গান গাইছে। (এই বাক্যে, “মেয়েটি” স্বাধীনভাবে ক্রিয়া (“গাইছে”) সম্পাদন করছে, তাই “মেয়েটি” মুখ্য কর্তা।)
২. প্রযোজক কর্তা:
যখন একজন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে কাজ করতে প্রণোদিত করে তখন তাকে প্রযোজক কর্তা বলে।
উদাহরণ:
- শিক্ষক ছাত্রকে শিক্ষা দিচ্ছেন। (এই বাক্যে, “শিক্ষক” ছাত্রকে (“শিক্ষা দিচ্ছেন”) কাজ করতে প্রণোদিত করছেন, তাই “শিক্ষক” প্রযোজক কর্তা।)
- বাবা ছেলেকে বই পড়তে বললেন। (এই বাক্যে, “বাবা” ছেলেকে (“বই পড়তে বললেন”) কাজ করতে প্রণোদিত করছেন, তাই “বাবা” প্রযোজক কর্তা।)
৩. প্রযোজ্য কর্তা:
যিনি প্রযোজক কর্তার কাজ সম্পাদন করেন তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে।
উদাহরণ:
- শিক্ষক ছাত্রকে শিক্ষা দিচ্ছেন। (এই বাক্যে, ছাত্র (“শিক্ষা দিচ্ছেন”) কাজটি সম্পাদন করছেন, তাই “ছাত্র” প্রযোজ্য কর্তা।)
- বাবা ছেলেকে বই পড়তে বললেন। (এই বাক্যে, ছেলে (“বই পড়তে”) কাজটি সম্পাদন করবে, তাই “ছেলে” প্রযোজ্য কর্তা।)
৪. ব্যতিহার কর্তা:
যখন একাধিক ব্যক্তি, জিনিস বা স্থান একই কাজ সম্পাদন করে তখন তাদেরকে ব্যতিহার কর্তা বলে।
উদাহরণ:
- ছেলে ও মেয়েটি বই পড়ছে। (এই বাক্যে, “ছেলে” ও “মেয়েটি” একই কাজ (“বই পড়ছে”) সম্পাদন করছে, তাই “ছেলে” ও “মেয়েটি” ব্যতিহার কর্তা।)
- গাছের পাতা ও ফুল ঝরে পড়েছে। (এই বাক্যে, “গাছের পাতা” ও “ফুল” একই কাজ (“ঝরে পড়েছে”) সম্পাদন করছে, তাই “গাছের পাতা” ও “ফুল” ব্যতিহার কর্তা।)
বাক্যের বাচ্য বা প্রকাশভঙ্গি অনুসারে কর্তা তিন ধরণের হতে পারে। যেমন –
কর্ম বাচ্য: যে বাক্যে কর্ম ক্রিয়ার প্রভাবে আসে এবং কর্তা বাদ দেওয়া হয়, তাকে কর্ম বাচ্য বলে।
উদাহরণ:
- বই পড়া হচ্ছে। (এই বাক্যে, “বই” (কর্ম) “পড়া হচ্ছে” (ক্রিয়া) এর প্রভাবে আসছে, কিন্তু “ছেলেটি” (কর্তা) বাদ দেওয়া হয়েছে।)
ভাব বাচ্য: যে বাক্যে ক্রিয়ার ভাব বা অর্থ প্রধান হয় এবং কর্তা ও কর্ম উভয়ই বাদ দেওয়া হয়, তাকে ভাব বাচ্য বলে।
উদাহরণ:
- বই পড়া হয়। (এই বাক্যে, “বই পড়া” (ক্রিয়া) এর ভাব বা অর্থ প্রধান, “ছেলেটি” (কর্তা) এবং “বই” (কর্ম) উভয়ই বাদ দেওয়া হয়েছে।)
কর্ম কর্তৃবাচ্য: যে বাক্যে কর্ম ক্রিয়া সম্পাদন করে এবং কর্তা ক্রিয়ার প্রভাবে আসে, তাকে কর্ম কর্তৃবাচ্য বলে।
উদাহরণ:
- বইটি আমার দ্বারা পড়া হয়েছে। (এই বাক্যে, “বইটি” (কর্ম) “পড়া হয়েছে” (ক্রিয়া) সম্পাদন করছে এবং “আমি” (কর্তা) ক্রিয়ার প্রভাবে আসছে।)
ভাব বাচ্যের কর্তা: ভাব বাচ্যে, ক্রিয়ার ভাব বা অর্থ প্রধান হয় এবং কর্তা ও কর্ম উভয়ই বাদ দেওয়া হয়।
উদাহরণ:
- বই পড়া হয়। (এই বাক্যে, “বই পড়া” (ক্রিয়া) এর ভাব বা অর্থ প্রধান, “ছেলেটি” (কর্তা) এবং “বই” (কর্ম) উভয়ই বাদ দেওয়া হয়েছে।)
ভাব বাচ্যে কর্তা থাকে না কারণ এই বাক্যগুলোতে ক্রিয়ার ভাব বা অর্থই প্রধান, কে কাজটি করছে বা কার উপর কাজের প্রভাব ফেলছে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, ভাব বাচ্যে কর্তার ধারণা অস্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
উদাহরণ:
- খাওয়া হচ্ছে। (এই বাক্যে, কে খাচ্ছে তা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি, তবে “কেউ” খাচ্ছে তা বোঝা যায়।)
অন্যদিকে, কিছু ক্রিয়াপদ ভাব বাচ্যে ব্যবহার করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর্তার ধারণা স্পষ্ট করে দেয়।
উদাহরণ:
- বৃষ্টি হচ্ছে। (এই বাক্যে, “বৃষ্টি” (কর্ম) “হচ্ছে” (ক্রিয়া) সম্পাদন করছে, এবং “বৃষ্টি” নিজেই ক্রিয়া সম্পাদন করছে বলে কর্তার ধারণা স্পষ্ট।)
কর্ম কর্তৃবাচ্যের কর্তা:
কর্ম কর্তৃবাচ্যের বাক্যে, যে বিশেষ্য বা সর্বনাম ক্রিয়ার প্রভাবে আসে তাকে কর্তা বলা হয়।
উদাহরণ:
- বইটি আমার দ্বারা পড়া হয়েছে। (এই বাক্যে, “বইটি” (কর্ম) “পড়া হয়েছে” (ক্রিয়া) সম্পাদন করছে, কিন্তু “আমি” (কর্তা) ক্রিয়ার প্রভাবে আসছে।)
কর্ম কারক কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রকারভেদ
কর্ম কারক বলতে বোঝায় যে বিশেষ্য বা সর্বনাম ক্রিয়ার ফল বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে।
উদাহরণ:
- ছেলেটি বই পড়ছে। (এই বাক্যে, “বই” ক্রিয়ার (“পড়ছে”) ফল বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছে, তাই “বই” কর্ম কারক।)
- মেয়েটি গান গাইছে। (এই বাক্যে, “গান” ক্রিয়ার (“গাইছে”) ফল বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছে, তাই “গান” কর্ম কারক।)
কর্ম কারকের প্রকারভেদ:
কর্ম কারককে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:
১. মুখ্য কর্ম:
যখন একক বস্তু ক্রিয়ার ফল বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে তখন তাকে মুখ্য কর্ম বলে।
উদাহরণ:
- ছেলেটি বই পড়ছে।
- মেয়েটি গান গাইছে।
- আমি চিঠি লিখছি।
২. গৌণ কর্ম:
যখন একাধিক বস্তু একসাথে ক্রিয়ার ফল বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে তখন তাদেরকে গৌণ কর্ম বলে।
উদাহরণ:
- ছেলেটি বই পড়ে চিঠি লিখছে। (এই বাক্যে, “বই” মুখ্য কর্ম এবং “চিঠি” গৌণ কর্ম।)
- মেয়েটি গান গায় নাচে। (এই বাক্যে, “গান” মুখ্য কর্ম এবং “নাচে” গৌণ কর্ম।)
- আমি চিঠি লিখে পোস্ট করছি। (এই বাক্যে, “চিঠি” মুখ্য কর্ম এবং “পোস্ট” গৌণ কর্ম।)
কর্মকারক আবার ৪ প্রকার। যেমন –
- সকর্মক ক্রিয়ার কর্ম
- প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম
- সমধাতুজ কর্ম
- উদ্দেশ্য ও বিধেয়
করণ কারক কাকে বলে? উদাহরণ দাও
করণ শব্দের অর্থ হচ্ছে যন্ত্র, সহায়ক বা উপায়। করণ কারক বলতে বোঝায় যে বিশেষ্য বা সর্বনাম ক্রিয়া সম্পাদনের সাধন, উপায় বা যন্ত্র কে নির্দেশ করে।
উদাহরণ:
- ছেলেটি কলম দিয়ে চিঠি লিখছে। (এই বাক্যে, “কলম দিয়ে” ক্রিয়া (“লিখছে”) সম্পাদনের সাধন নির্দেশ করছে, তাই “কলম দিয়ে” করণ কারক।)
- মেয়েটি গাড়িতে করে বাজারে গেল। (এই বাক্যে, “গাড়িতে করে” ক্রিয়া (“গেল”) সম্পাদনের উপায় নির্দেশ করছে, তাই “গাড়িতে করে” করণ কারক।)
- কর্মীটি হাতুড়ি দিয়ে কাঠ ভাঙছে। (এই বাক্যে, “হাতুড়ি দিয়ে” ক্রিয়া (“ভাঙছে”) সম্পাদনের যন্ত্র নির্দেশ করছে, তাই “হাতুড়ি দিয়ে” করণ কারক।)
সম্প্রদান কারক কী বা কাকে বলে? উদাহরণ দাও
যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে দান, অর্চনা, সাহায্য ইত্যাদি করা হয়, তাকে সম্প্রদান কারক বলে। বস্তু নয়, ব্যক্তিই সম্পাদন কারক। যেমন – ভিখারিকে ভিক্ষা দাও। আবার ক্রিয়ার সাথে কাকে নিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই সম্প্রদান কারক।
সম্প্রদান কারকের উদাহরণঃ
- অন্যহীনে অন্ন দাও।
- গুরুজনে কর নতি।
- দিব তোমা শ্রদ্ধাভক্তি।
- আমায় একটু আশ্রয় দিন।
- গৃহহীনে গৃহ দাও।
- দেশের জন্য প্রাণ দাও।
- ভিক্ষা দাি দুয়ারে দাঁড়ায়ে ভিক্ষুক।
অপাদান কারক কাকে বলে? উদাহরণ দাও
যা থেকে কিছু বিচ্যুতি, গৃহীত, জাত, বিরত, আরম্ভ দূরীভূত ও রক্ষিত হয় এবং যা দেখে কেউ ভীত হয়, তাকে অপদান কারক বলে। যেমন – বিপদে মোরে রক্ষা কর। ক্রিয়াকে কোথা হতে বা কি হতে বা কিসের হতে দিয়ে প্রশ্ন করলে অপাদান কারক পাওয়া যায়।
অপাদান কারকের উদাহরণঃ
বিচ্যুত | মেঘ থেকে বৃষ্টি পড়ে। |
গৃহীত | দুধ থেকে দই হয়। |
জাত | খজুর রসে গুড় হয়। |
বিরত | পাপে বিরত হও। |
দূরীভূত | দেশ থেকে পঙ্গপাল চলে গেছে। |
রক্ষিত | বিপদ থেকে বাঁচাও। |
আরম্ভ | সোমবার থেকে পরীক্ষা শুরু। |
ভীত | বাঘকে ভয় পায় না কে? |
অধিকরণ কারক কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রকারভেদ
অধিকরণ কারক বলতে বোঝায় যে বিশেষ্য বা সর্বনাম ক্রিয়ার কাল, স্থান বা আধার প্রকাশ করে। অন্য কথায়, অধিকরণ কারক কখন, কোথায় বা কিসের উপর কাজটি ঘটছে তা বলে।
উদাহরণ:
- **আমি রোজ সকালে বাজারে যাই। (এই বাক্যে, “সকালে” ক্রিয়ার (“যাই”) কাল প্রকাশ করছে, তাই “সকালে” অধিকরণ কারক। “বাজারে” ক্রিয়ার (“যাই”) স্থান প্রকাশ করছে, তাই “বাজারে” অধিকরণ কারক।)
- **ছেলেটি গাছের তলায় বসে বই পড়ছে। (এই বাক্যে, “গাছের তলায়” ক্রিয়ার (“বসে”) আধার প্রকাশ করছে, তাই “গাছের তলায়” অধিকরণ কারক।)
- **মেয়েটি আজ স্কুলে যাবে না। (এই বাক্যে, “আজ” ক্রিয়ার (“যাবে না”) কাল প্রকাশ করছে, তাই “আজ” অধিকরণ কারক। “স্কুলে” ক্রিয়ার (“যাবে না”) স্থান প্রকাশ করছে, তাই “স্কুলে” অধিকরণ কারক।)
অধিকরণ কারকের প্রকারভেদ:
অধিকরণ কারক কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
১. কালাধিকরণ:
কালাধিকরণ ক্রিয়ার কাল প্রকাশ করে।
উদাহরণ:
- আমি কাল ঢাকায় যাব। (“কাল” ক্রিয়ার (“যাব”) কাল প্রকাশ করছে, তাই “কাল” কালাধিকরণ।)
- **মেয়েটি সকাল থেকে বিকেল হওয়া পর্যন্ত পড়াশোনা করল। (“সকাল থেকে” এবং “বিকেল হওয়া পর্যন্ত” ক্রিয়ার (“পড়াশোনা করল”) কাল প্রকাশ করছে, তাই “সকাল থেকে” এবং “বিকেল হওয়া পর্যন্ত” কালাধিকরণ।)
২. আধারাধিকরণ:
আধারাধিকরণ ক্রিয়ার আধার প্রকাশ করে।
আধারাধিকরণ কে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
- ঐকদেশিক আধারাধিকরণ: একই স্থানে অবস্থানকারী আধার প্রকাশ করে।
- উদাহরণ: ছেলেটি গাছে চড়ল।** (“গাছে” ক্রিয়ার (“চড়ল”) ঐকদেশিক আধার প্রকাশ করছে।)
- বৈষয়িক আধারাধিকরণ: বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত আধার প্রকাশ করে।
- উদাহরণ: ছেলেটি বইটি টেবিলে রাখল।** (“টেবিলে” ক্রিয়ার (“রাখল”) বৈষয়িক আধার প্রকাশ করছে।)
- অভিব্যাপক আধারাধিকরণ: স্থানের পরিবর্তে অবস্থা, গুণ, সময় ইত্যাদি প্রকাশ করে।
- উদাহরণ: ছেলেটি খুব দ্রুত দৌড়ালো।
৩. স্থানাধিকরণ:
স্থানাধিকরণ ক্রিয়ার স্থান প্রকাশ করে।
স্থানাধিকরণ কে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
- নির্দিষ্ট স্থানাধিকরণ: নির্দিষ্ট স্থান প্রকাশ করে।
- উদাহরণ: ছেলেটি ঢাকায় থাকে।** (“ঢাকায়” ক্রিয়ার (“থাকে”) নির্দিষ্ট স্থান প্রকাশ করছে।)
- অনির্দিষ্ট স্থানাধিকরণ: অনির্দিষ্ট স্থান প্রকাশ করে।
- উদাহরণ: ছেলেটি কোথায় গেছে জানি না।** (“কোথায়” ক্রিয়ার (“গেছে”) অনির্দিষ্ট স্থান প্রকাশ করছে।)
বিভক্তি কী? বিভক্তি কত প্রকার ও কি কি?
বাক্যে ব্যবহৃত শব্দ বা শব্দগুলোর কারক চিহ্নিত করার জন্য শব্দের শেষে যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়, তাকে বিভক্তি বলে।
যেমন – ছাদে বসে মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। এ বাক্যে ছাদে (ছাদ + এ বিভক্তি), মা (মা + ০ বিভক্তি), শিশুকে (শিশু + কে বিভক্তি), চাঁদ (চাঁদ + ০ বিভক্তি) ইত্যাদি পদে বিভিন্ন বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।
বিভক্তি প্রধানত দুই প্রকার। যথা –
- নাম বা শব্দ বিভক্তি
- ক্রিয়া বিভক্তি
বিভক্তির আকৃতি
একবচন এবং বহুবচন ভেদে বিভক্তির আকৃতিগত পার্থক্য দেখা যায়। যেমন –
বিভক্তি | একবচন | বহুবচন |
প্রথমা | ০,অ,এ,(য়),তে | রা, এরা, গুলো, গণ |
দ্বিতীয়া | কে, রে, এরে | দিগে, দিগকে, দের |
তৃতীয়া | দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক | দের, দিয়া, দিগকে দ্বারা, দিগ কর্তৃক |
চতুর্থী | দ্বিতীয়ার মতো, জন্য, নিমিত্ত | দ্বিতীয়ার মতো |
পঞ্চমী | হইতে, থেকে, চেয়ে, হতে | দের হইতে, দিগের চেয়ে |
ষষ্ঠী | র, এর | দিগের, দের, গুলির |
সপ্তমী | এ, (য়), তে, এতে | দিগে, দিগেতে, গুলিতে |