SC > বিজ্ঞান > আধুনিক অর্থনীতির জনক কাকে বলা হয়?

আধুনিক অর্থনীতির জনক কাকে বলা হয়?

আধুনিক অর্থনীতির জনক: অ্যাডাম স্মিথ।

অর্থনীতি বিজ্ঞানের এক গুরুত্বপূর্ণ শাখা যা সমাজের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সম্পদের উৎপাদন, বণ্টন এবং ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করে। অর্থনীতির বিভিন্ন শাখা ও চিন্তাধারার মাঝে অ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith) কে “আধুনিক অর্থনীতির জনক” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার চিন্তাভাবনা এবং গ্রন্থগুলি অর্থনীতি বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং এই ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য।

অ্যাডাম স্মিথের পরিচয়

অ্যাডাম স্মিথ একজন স্কটিশ দার্শনিক এবং অর্থনীতিবিদ ছিলেন, যার জন্ম ১৭২৩ সালে স্কটল্যান্ডের কার্ককাল্ডিতে। তিনি গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। স্মিথের দুইটি প্রধান গ্রন্থ, “The Theory of Moral Sentiments” এবং “An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations” (সংক্ষেপে “The Wealth of Nations”) তাকে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি ও দার্শনিক জগতে পরিচিতি প্রদান করেছে। “The Wealth of Nations,” প্রকাশিত হয় ১৭৭৬ সালে, যা তাকে আধুনিক অর্থনীতির জনক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।

আরও পড়ুন: অর্থনীতি কাকে বলে? অর্থনীতি কত প্রকার ও কি কি?

“The Wealth of Nations” এবং তার অর্থনৈতিক তত্ত্ব

“The Wealth of Nations” গ্রন্থে স্মিথ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। গ্রন্থটি পাঁচটি বইয়ে বিভক্ত, যেখানে বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া, উৎপাদন, বণ্টন, বাজারের স্বয়ংসম্পূর্ণতা, এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

১. বিনিময় এবং বাজার অর্থনীতি

স্মিথের মতে, ব্যক্তিরা যখন নিজ স্বার্থে কাজ করে, তখন সমাজের সামগ্রিক মঙ্গল ঘটে। এটি “অদৃশ্য হাত” (Invisible Hand) তত্ত্বের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, বাজারে ব্যক্তি স্বার্থে কাজ করা হলেও এটি শেষ পর্যন্ত সমাজের মঙ্গল সাধন করে। স্মিথ যুক্তি দিয়েছিলেন যে বাজারে মুক্ত প্রতিযোগিতা এবং নিজ স্বার্থে পরিচালিত ক্রিয়াকলাপগুলি অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সম্পদ সৃষ্টি করে।

২. শ্রম বিভাজন

অ্যাডাম স্মিথের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো শ্রম বিভাজন (Division of Labor)। তার মতে, শ্রম বিভাজন উৎপাদনশীলতা বাড়ায় কারণ এতে শ্রমিকরা নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ হয়ে ওঠে। তিনি একটি সুই কারখানার উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন যে, শ্রমিকদের মধ্যে কাজ ভাগ করে দিলে তারা যৌথভাবে অনেক বেশি উৎপাদন করতে পারে।

৩. মুক্ত বাজার এবং সীমিত সরকার

স্মিথের ধারণা অনুসারে, মুক্ত বাজার (Free Market) অর্থনীতি স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে কাজ করতে সক্ষম, যেখানে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ হয়। স্মিথ বিশ্বাস করতেন যে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ কম হওয়া উচিত এবং এটি শুধু জাতীয় প্রতিরক্ষা, ন্যায়বিচার ব্যবস্থা, এবং জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।

আধুনিক অর্থনীতিতে অ্যাডাম স্মিথের প্রভাব

অ্যাডাম স্মিথের অর্থনৈতিক তত্ত্বগুলি আধুনিক অর্থনীতি এবং নীতি-নির্ধারণে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তার অদৃশ্য হাত তত্ত্ব বাজার অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপন করেছে, যা বর্তমানে অনেক দেশের অর্থনৈতিক নীতির একটি প্রধান অংশ। শ্রম বিভাজনের ধারণা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়।

অ্যাডাম স্মিথের তত্ত্বগুলি শুধু তার সময়ের জন্যই প্রাসঙ্গিক ছিল না, বরং বর্তমান সময়েও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। তার মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং সরকারের সীমিত ভূমিকা সম্পর্কে ধারণাগুলি আধুনিক পুঁজিবাদী অর্থনীতির মূলভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রবণতা, যেমন গ্লোবালাইজেশন এবং মুক্ত বাজারনীতি, স্মিথের তত্ত্বগুলির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

উপসংহার

অ্যাডাম স্মিথের চিন্তাধারা এবং তার রচনা অর্থনীতি বিজ্ঞানে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তিনি “আধুনিক অর্থনীতির জনক” হিসেবে স্বীকৃত, কারণ তার তত্ত্বগুলি অর্থনীতির মূলনীতিগুলি প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং ভবিষ্যতে অর্থনীতি কিভাবে পরিচালিত হবে তা নির্দেশ করেছে। স্মিথের তত্ত্বগুলি আজও প্রাসঙ্গিক এবং অর্থনৈতিক নীতি, গবেষণা, এবং বিশ্ব অর্থনীতির বিশ্লেষণে প্রধান ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তার চিন্তাভাবনা এবং গবেষণা আজও আধুনিক অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপন করে যাচ্ছে এবং আমাদের অর্থনৈতিক বিশ্বের গভীরতর বোঝাপড়া নিশ্চিত করছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top