SC > বিজ্ঞান > অভিযোজন কাকে বলে? অভিযোজন এর উদ্দেশ্য কি?

অভিযোজন কাকে বলে? অভিযোজন এর উদ্দেশ্য কি?

অভিযোজন (Adaptation) হলো জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ তার পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয়। অভিযোজন প্রক্রিয়া জীববৈচিত্র্যের টিকে থাকার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং তাদের পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।

অভিযোজনের সংজ্ঞা | অভিযোজন কাকে বলে?

অভিযোজন বলতে বোঝায় জীবজগতের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির পার্থক্য এবং তাদের পরিবেশের উপযোগী বৈশিষ্ট্য বা আচরণের পরিবর্তন। এটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন:

  1. শারীরিক অভিযোজন: যেমন, মরুভূমির প্রাণীগুলোর ত্বক সোনালী রঙের হয় যা সূর্যের তাপ শোষণ কমাতে সাহায্য করে।
  2. আচরণগত অভিযোজন: যেমন, কিছু প্রাণী শীতকালীন অভিবাসন করে তাদের খাদ্যসংস্থান এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য।
  3. ফিজিওলজিকাল অভিযোজন: যেমন, মানবদেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘাম নির্গমনের প্রক্রিয়া।

অভিযোজন এর জনক কে?

অভিযোজনের প্রাথমিক ধারণা ও তত্ত্বের ভিত্তি স্থাপনকারী ব্যক্তি হলেন চার্লস ডারউইন (Charles Darwin)।

চার্লস ডারউইন তার বিখ্যাত গ্রন্থ “অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিজ” (On the Origin of Species) তে প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্বের মাধ্যমে অভিযোজনের গুরুত্ব এবং ভূমিকা বর্ণনা করেছেন। তার গবেষণায় দেখা যায় কিভাবে প্রজাতিগুলি তাদের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয় এবং এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক নির্বাচন তাদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে।

ডারউইনের কাজ অভিযোজনের মৌলিক ধারণার ভিত্তি স্থাপন করে এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন, যা অভিযোজনের একটি প্রধান প্রক্রিয়া, তার তত্ত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

আরও পড়ুন: বন্য প্রাণীদের রক্ষা করার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়?

অভিযোজন এর উদ্দেশ্য কি?

অভিযোজনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো জীববৈচিত্র্যের টিকে থাকার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং তাদের পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেওয়া। অভিযোজনের মাধ্যমে জীবজগত নিম্নলিখিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে:

  1. জীবনের টিকিয়ে রাখা: অভিযোজনের মাধ্যমে একটি প্রজাতি তার পরিবেশে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক, আচরণগত এবং ফিজিওলজিকাল পরিবর্তনগুলি গ্রহণ করে।
  2. খাদ্যসংস্থান বৃদ্ধি: অভিযোজনের ফলে একটি প্রজাতি খাদ্যের সন্ধান এবং আহরণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে সহায়ক।
  3. প্রাকৃতিক বিপদ প্রতিরোধ: অভিযোজনের মাধ্যমে প্রজাতি প্রাকৃতিক বিপদ যেমন শিকারী, রোগ বা পরিবেশগত পরিবর্তনের বিরুদ্ধে নিজেদের সুরক্ষিত করতে পারে।
  4. প্রজনন সফলতা: অভিযোজন প্রজাতির প্রজনন সফলতা বাড়ায়, যেমন প্রজনন মৌসুমের সময় পরিবর্তন বা বাচ্চাদের প্রতি যত্ন।
  5. পরিবেশের সাথে সঙ্গতি: অভিযোজনের মাধ্যমে প্রজাতি তাদের পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে সঙ্গতি রেখে নিজেদের বৈশিষ্ট্য এবং আচরণ পরিবর্তন করে।

অভিযোজনের উদাহরণ

১. মরুভূমির প্রাণী: মরুভূমির প্রাণীদের শরীরে জল সংরক্ষণ করার ক্ষমতা থাকে এবং তাদের ত্বক সূর্যের তাপ থেকে সুরক্ষা দেয়।

২. পাখিদের মাইগ্রেশন: অনেক পাখি শীতকালে উষ্ণ এলাকায় অভিবাসন করে যাতে তারা খাদ্য ও আবাসস্থল লাভ করতে পারে।

৩. ফলবীজের পৃষ্ঠদেশ: কিছু উদ্ভিদের ফলবীজে পতনশীল পাখনাযুক্ত গঠন থাকে যা বাতাসের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করতে সহায়ক।

অভিযোজন প্রয়োজন কেন?

অভিযোজন প্রয়োজন কারণ এটি জীবদের পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে সহায়ক, তাদের টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়ায়, খাদ্যসংস্থান ও প্রতিরক্ষা দক্ষতা উন্নত করে, এবং প্রজনন সফলতা বৃদ্ধি করে। এটি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রজাতির বিকাশে সহায়ক।

উপসংহার

অভিযোজন জীববৈচিত্র্যের বিকাশ এবং টিকিয়ে রাখার জন্য অপরিহার্য। এটি প্রজাতির টিকে থাকার সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে সহায়ক। অভিযোজনের মাধ্যমে জীবজগতের প্রতিটি সদস্য তাদের পরিবেশের পরিবর্তন অনুযায়ী নিজেদের উন্নত করতে সক্ষম হয়, যা প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top