বাংলা বারো মাসের নাম: বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র। প্রতিটি মাসের সাথে বাংলার ঋতু ও উৎসব সম্পর্কিত।
বাংলা বারো মাসের নাম কি কি?
বাংলা মাস | ইংরেজি মাস | কাল/ঋতু |
---|---|---|
বৈশাখ | এপ্রি | গ্রীষ্মকাল |
জ্যৈষ্ঠ | মে-জুন | |
আষাঢ় | জুন-জুলাই | বর্ষাকাল |
শ্রাবণ | জুলাই-আগস্ট | |
ভাদ্র | আগস্ট-সেপ্টেম্বর | শরৎকাল |
আশ্বিন | সেপ্টেম্বর-অক্টোবর | |
কার্তিক | অক্টোবর-নভেম্বর | হেমন্তকাল |
অগ্রহায়ণ | নভেম্বর-ডিসেম্বর | |
পৌষ | ডিসেম্বর-জানুয়ারি | শীতকাল |
মাঘ | জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি | |
ফাল্গুন | ফেব্রুয়ারি-মার্চ | বসন্তকাল |
চৈত্র | মার্চ-এপ্রিল |
বাংলা বারো / ১২ মাসের নাম ইংরেজীতে
বাংলা বারো মাসের নামের ইংরেজি অনুবাদ নিম্নরূপ:
- বৈশাখ (Baishakh)
- জ্যৈষ্ঠ (Jaishthya)
- আষাঢ় (Asharh)
- শ্রাবণ (Shraban)
- ভাদ্র (Bhadra)
- আশ্বিন (Ashwin)
- কার্তিক (Kartik)
- অগ্রহায়ণ (Agrahayan)
- পৌষ (Poush)
- মাঘ (Magh)
- ফাল্গুন (Falgun)
- চৈত্র (Chaitra)
এই নামগুলো বাংলা সনের মাসগুলির ইংরেজি প্রতিলিপি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আরও পড়ুন: ছয় ঋতুর নাম ইংরেজিতে | বাংলা ৬ ঋতুর নাম
বাংলা বারো মাসের নাম ও তাদের বৈশিষ্ট্য
বাংলা সনের বারোটি মাস বাংলা সংস্কৃতি ও কৃষিজীবী সমাজের ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিটি মাসের সাথে বাংলাদেশের ঋতু, আবহাওয়া, ও কৃষিকাজের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। আসুন, বাংলা সনের বারো মাসের নাম ও তাদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করি।
১. বৈশাখ
বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম মাস এবং এটি সাধারণত এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়। বৈশাখ মাসে নতুন বছর পালিত হয়, যা ‘পহেলা বৈশাখ’ নামে পরিচিত। এই মাসটি গ্রীষ্মকালীন ঋতুর অন্তর্ভুক্ত এবং গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া থাকে। কৃষকরা এই সময়ে নতুন ফসলের জন্য মাঠ প্রস্তুত করেন।
২. জ্যৈষ্ঠ
জ্যৈষ্ঠ মাসটি বাংলা সনের দ্বিতীয় মাস, যা মে ও জুন মাসের মধ্যে পড়ে। এটি গ্রীষ্মের চরম সময় এবং প্রচণ্ড গরম এবং ঝড়ের সময় হিসেবে পরিচিত। এই মাসকে “মধুমাস” বলা হয় কারণ এই সময়ে আম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন ফল পাকতে শুরু করে।
৩. আষাঢ়
আষাঢ় মাসটি বর্ষার শুরু হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এটি জুন ও জুলাই মাসে পড়ে। এ সময়ে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে এবং প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। কৃষকরা এই সময়ে ধান বপন শুরু করেন, যা বাংলাদেশের কৃষির অন্যতম প্রধান ফসল।
৪. শ্রাবণ
শ্রাবণ মাস হলো বর্ষাকালের শীর্ষ মাস এবং এটি জুলাই ও আগস্ট মাসে পড়ে। এ সময়ে সারা দেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয় এবং নদ-নদীগুলোতে পানি বেড়ে যায়। শ্রাবণ মাসটি বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে বৃষ্টির রোমান্টিক প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
৫. ভাদ্র
ভাদ্র মাসটি বর্ষা ঋতুর শেষ মাস এবং এটি আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে পড়ে। এই সময়ে বৃষ্টিপাত কমতে শুরু করে এবং ফসলের মাঠে ধান গাছগুলো বেড়ে ওঠে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এই মাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ সময় দুর্গা পূজার প্রস্তুতি শুরু হয়।
৬. আশ্বিন
আশ্বিন মাসটি শরৎ ঋতুর শুরু এবং এটি সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে পড়ে। এ সময়ে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায় এবং আবহাওয়া সুন্দর ও মনোরম হয়। শরতের কাশফুল, শিউলি ফুলের সুগন্ধি এবং দুর্গা পূজার আমেজ পুরো বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে।
৭. কার্তিক
কার্তিক মাসটি শরতের শেষ মাস এবং অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে পড়ে। এই সময়ে আবহাওয়া আরও শীতল হতে শুরু করে। হেমন্ত ঋতুর আগমনী বার্তা নিয়ে আসে কার্তিক, যা কৃষিজীবী সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে আমন ধান কাটা শুরু হয় এবং কৃষকরা মাঠে ব্যস্ত সময় পার করেন।
৮. অগ্রহায়ণ
অগ্রহায়ণ মাসটি হেমন্ত ঋতুর প্রথম মাস এবং এটি নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে পড়ে। এই মাসকে “নবীন” বা “নবান্ন” মাস বলা হয়, কারণ এই সময়ে নতুন ধান ঘরে তোলা হয় এবং বিভিন্ন অঞ্চলে নবান্ন উৎসব পালিত হয়। এটি কৃষিজীবী সমাজের জন্য বিশেষ আনন্দের সময়।
৯. পৌষ
পৌষ মাসটি হেমন্ত ঋতুর শেষ মাস এবং ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পড়ে। এই সময়ে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকে এবং রাতগুলো দীর্ঘ হয়। এই মাসে কৃষকরা ধান মাড়াই এবং অন্যান্য শস্যের সংরক্ষণ কাজে ব্যস্ত থাকেন। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে গ্রামবাংলায় মেলা ও উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
১০. মাঘ
মাঘ মাসটি শীতের চরম সময় হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এটি জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে পড়ে। এ সময়ে ঠান্ডা বাতাস এবং কুয়াশা থাকে, যা ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ায়। তবে এই মাসে সরিষা, আলু, এবং অন্যান্য শীতকালীন শস্যের চাষাবাদও প্রচুর হয়।
১১. ফাল্গুন
ফাল্গুন মাসটি বসন্ত ঋতুর প্রথম মাস এবং এটি ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে পড়ে। এই সময়ে প্রকৃতি নবযৌবন ধারণ করে, গাছের পাতা নতুন করে গজায় এবং বিভিন্ন ফুল ফুটে ওঠে। “ফাগুন হাওয়া”র মিষ্টি স্পর্শে বাংলার মানুষ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এই মাসে পহেলা ফাল্গুন এবং ভালবাসা দিবস পালিত হয়।
১২. চৈত্র
চৈত্র মাসটি বসন্ত ঋতুর শেষ মাস এবং মার্চ ও এপ্রিল মাসে পড়ে। এই মাসটি বাংলার শেষ মাস এবং বছরের শেষ দিনকে ‘চৈত্র সংক্রান্তি’ বলা হয়। এই সময়ে আবহাওয়া শুকনো ও গরম হতে শুরু করে। চৈত্র মাসে বাজারগুলোতে “চৈত্র সেল” নামে পরিচিত বিশেষ ছাড়ের দোকানগুলোও দেখা যায়।
উপসংহার
বাংলা বারো মাস শুধু সময়ের মাপকাঠি নয়, এটি বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং প্রকৃতির সাথে গভীরভাবে জড়িত। প্রতিটি মাসের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলার কৃষিজীবী সমাজের জীবনের আনন্দ, দুঃখ, উৎসব এবং কঠোর পরিশ্রম। এভাবেই বাংলা সনের মাসগুলো আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে তোলে।