SC > অন্যান্য > বন্যা কাকে বলে? বন্যা কি? বন্যার কারণ ও ফলাফল লেখ

বন্যা কাকে বলে? বন্যা কি? বন্যার কারণ ও ফলাফল লেখ

বন্যা হলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত পানি, যা স্থলভাগে ডুবে যায় এবং মানুষ, জীবজন্তু এবং সম্পত্তিকে ক্ষতি করে। বন্যা প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট উভয় কারণেই হতে পারে। নিচে বন্যা কাকে বলে? বন্যা কি? বন্যার কারণ ও ফলাফল লেখ ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

বন্যা কাকে বলে

বন্যা কাকে বলে? বন্যা কি?

বন্যা হলো পানির অত্যধিক প্রবাহ যা সাধারণত শুষ্ক জমিকে নিমজ্জিত করে। আবার বলা যায় স্থলভূমি জল দ্বারা প্লাবিত হলে তাকে বন্যা বলে।

বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে বন্যা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত “বন্যা সাড়াদান প্রস্তুতি পরিকল্পনা: বাংলাদেশ” (জুন,২০১৫) শীর্ষক নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭৪, ১৯৮৮, ১৯৯৮ এবং ২০০৭ সালের বন্যায় যথাক্রমে দেশের ৩৬%, ৬১%, ৬৮% এবং ৪৩% এলাকা প্লাবিত হয়।

বন্যার কারণ

বন্যা প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট উভয় কারণেই হতে পারে। নিচে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

প্রাকৃতিক কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত: যখন অস্বাভাবিকভাবে বৃষ্টিপাত হয়, তখন নদী, খাল এবং জলাভূমি পানিতে ভরে যায় এবং তাদের তীরে অবস্থিত স্থলভাগ ডুবে যায়।
  • বরফ গলে যাওয়া: বসন্তের সময়, পাহাড়ের বরফ গলে যাওয়া নদীর পানি বৃদ্ধি করতে পারে এবং বন্যার কারণ হতে পারে।
  • ঝড়ের ঢেউ: উচ্চ-শক্তির ঝড়ের ঢেউ উপকূলীয় এলাকায় বন্যার কারণ হতে পারে।
  • সুনামি: ভূমিকম্প বা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সুনামি সৃষ্টি হতে পারে, যা উপকূলীয় এলাকায় বন্যার কারণ হতে পারে।

মানবসৃষ্ট কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • বাঁধ নির্মাণ: বাঁধ নদীর পানি ধরে রাখে, যা নীচের অংশে বন্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
  • বন উজাড়: বন উজাড়ের ফলে মাটির ক্ষয় হয়, যা পানি ধরে রাখার ক্ষমতা হ্রাস করে এবং বন্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
  • শহরাঞ্চলে অপরিকল্পিত উন্নয়ন: শহরাঞ্চলে অপরিকল্পিত উন্নয়ন পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত করতে পারে এবং বন্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
  • জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার ধরণ পরিবর্তিত হচ্ছে, যার ফলে আরও চরম আবহাওয়ার ঘটনা, যেমন অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং ঝড় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশের বন্যার ক্ষেত্রে, কিছু নির্দিষ্ট কারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:

  • নিম্নভূমি: বাংলাদেশ সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি অবস্থিত একটি নিম্নভূমি দেশ।
  • নদী: বাংলাদেশে প্রচুর নদী রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলি বর্ষাকালে প্লাবিত হয়।
  • উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্ব: বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব বেশি, বিশেষ করে নদীর তীরে। এর মানে হল যে বন্যার সময় অনেক লোক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
  • জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বন্যার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

বন্যার প্রভাব ও ফলাফল

বন্যার ফলাফল ব্যাপক এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, মানুষ, জীবজন্তু, সম্পত্তি এবং পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

মানুষের উপর প্রভাব:

  • জীবনহানি: বন্যা মানুষের প্রাণহানির অন্যতম প্রধান কারণ।
  • আহত এবং বাস্তুচ্যুত: বন্যায় অনেক লোক আহত হয় এবং তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বাস্তুচ্যুত হয়।
  • রোগব্যাধি: বন্যার ফলে জলবাহিত রোগ, যেমন ডায়রিয়া, কলেরা এবং টাইফয়েড ছড়িয়ে পড়তে পারে।
  • খাদ্য ঘাটতি: বন্যা ফসলের ক্ষতি করে এবং খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে।
  • মানসিক প্রভাব: বন্যার মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং ট্রমা দেখা দিতে পারে।

জীবজন্তুর উপর প্রভাব:

  • মৃত্যু: বন্যায় অনেক প্রাণী মারা যায়।
  • বাসস্থান ধ্বংস: বন্যা বন্যপ্রাণীর বাসস্থান ধ্বংস করে।
  • খাদ্য ঘাটতি: বন্যা বন্যপ্রাণীর খাদ্যের উৎস ধ্বংস করে।

সম্পত্তির উপর প্রভাব:

  • বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি: বন্যা বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অবকাঠামো কে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
  • ফসলের ক্ষতি: বন্যা ফসলের ক্ষতি করে এবং কৃষকদের অর্থনৈতিক ক্ষতি করে।
  • পরিবহন ব্যবস্থার ব্যাঘাত: বন্যা পরিবহন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে।

পরিবেশের উপর প্রভাব:

  • মাটির ক্ষয়: বন্যা মাটির ক্ষয় করে এবং মাটির উর্বরতা হ্রাস করে।
  • জল দূষণ: বন্যা জল দূষণ করে।
  • জীববৈচিত্র্য হ্রাস: বন্যা জীববৈচিত্র্য হ্রাস করে।

বন্যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব:

  • অর্থনৈতিক ক্ষতি: বন্যার দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রভাব থাকে, কারণ পুনর্বাসন এবং পুনর্গঠনে অনেক অর্থ ব্যয় হয়।
  • সামাজিক অস্থিরতা: বন্যা সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, কারণ মানুষ সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা করে।
  • পরিবেশগত অবক্ষয়: বন্যার দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশগত প্রভাব থাকে, কারণ মাটির ক্ষয় এবং জল দূষণ পরিবেশের মান হ্রাস করে।

বন্যা কত প্রকার ও কি কি? বাংলাদেশে বন্যা কয় ধরণের

বাংলাদেশে মূলত চার ধরণের বন্যা দেখা যায়।

১) মৌসুমী জলবায়ুর প্রভাবে নদ-নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি জনিত বর্ষাকালীন বন্যা:

  • সাধারণত জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলো ও তাদের শাখা বা উপনদীগুলোতে ধীরে ধীরে পানি বৃদ্ধি পায়।
  • বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, নদীর ধারণক্ষমতা এবং জোয়ারের প্রভাব এই বন্যার তীব্রতা নির্ধারণ করে।
  • বাংলাদেশের বন্যার সবচেয়ে সাধারণ এবং ব্যাপক ধরণ হলো এই বর্ষাকালীন বন্যা।

২) আকস্মিক (পাহাড়ী ঢল) বন্যা:

  • পাহাড়ি এলাকায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বা বরফ গলে যাওয়ার ফলে হঠাৎ করে নদীতে প্রচুর পরিমাণে পানি আসে, যার ফলে আকস্মিক বন্যা হয়।
  • এই ধরণের বন্যা দ্রুত ঘটে এবং তীব্র হয়।
  • উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় এই ধরণের বন্যা বেশি দেখা যায়।

৩) অপ্রতুল নিস্কাষণ ব্যবস্থা জনিত বন্যা:

  • শহরাঞ্চলে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন এর ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়।
  • অতিবৃষ্টির সময় পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় শহরাঞ্চলে বন্যা হয়।
  • ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বড় শহরগুলোতে এই ধরণের বন্যা বেশি দেখা যায়।

৪) সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে ঝড় সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস বা জোয়ারের উচ্চতা জনিত বন্যা:

  • উচ্চ-শক্তির ঝড়ের ঢেউ উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করে, যার ফলে বন্যা হয়।
  • চাঁদের অবস্থানের প্রভাবে জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলেও বন্যা হতে পারে।
  • বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকায় এই ধরণের বন্যা বেশি দেখা যায়।

উল্লেখ্য যে, এই চার ধরণের বন্যা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বর্ষাকালীন বন্যার পানি শহরাঞ্চলে জমে থাকলে অপ্রতুল নিস্কাষণ ব্যবস্থা জনিত বন্যা হতে পারে।

বন্যার ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • বাঁধ এবং জলাভূমি নির্মাণ
  • বনায়ন
  • শহরাঞ্চলে পরিকল্পিত উন্নয়ন
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতি সতর্কতা ব্যবস্থা উন্নত করা
  • জরুরী প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা তৈরি করা

আরও পড়ুন: প্রাথমিক চিকিৎসা কাকে বলে? প্রাথমিক চিকিৎসার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top